নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ১১ আগস্ট দুপুর ১টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই মহতী অনুষ্ঠানের শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবাণী ও দলীয় গানের পাশাপাশি দলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালিত হয়।
উদ্বোধন উম্মোচনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। সম্মেলের সূচনা লগ্নে দলের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এর শুভ সূচনা হয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি মূল বক্তব্যের জন্য উপস্থিত থাকবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলের সামগ্রিক পরিচালনা, নতুন পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের জন্য দিকনির্দেশনা দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এছাড়াও, বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের নেতাকর্মীরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, এবং এ.এইচ.এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এতে জেলার ১৪টি ইউনিটের প্রায় ১ হাজার ৪১৪ জন ভোটার গোপন ব্যালটে কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোনীত করবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও শুরু হয়েছে, কে পেতে পারেন নেতৃত্ব, কারা শুরু করবেন সংগঠনের নতুন দিগন্ত—এসব নিয়ে বিভিন্ন মতামত উঠে আসছে।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। অল্প দিন আগেই নানা বাধা-বিঘ্ন সত্ত্বেও দলের কৌশল ও পরিশ্রমে নতুন নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শহর ও বিভিন্ন ইউনিটে নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে সাজতে শুরু করেছে। ১৭ বছর ধরে চলা হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরণের কারণে নেতাকর্মীরা দুর্বল হয়ে পড়েছিল; কিন্তু এই সম্মেলন তাদের মনোবল ও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে।
মূলত নতুন নেতৃত্বের আগমনে দলের প্রতীয়মান ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় হবে—এমন প্রত্যাশা করছে নেতাকর্মীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূল থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞ নেতারা আবার নেতৃত্বে আসবে বা নতুন প্রজন্মের মাঝে স্থান করে নেবে। কেউ কেউ মনে করছেন, যারা দীর্ঘকাল রাজপথে ছিলেন, দলবদ্ধভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁরা সবার ওপর প্রাধান্য পাবেন।
আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী, ২০১০ সালে terakhir জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়ে থাকলেও, এরপর পরবর্তী কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৫ সালে কমিটি বিলুপ্তির পর থেকে নতুন কমিটি গঠনের জন্য অপেক্ষা চলছিল। এ দীর্ঘ সময়ে ২০২২ সালে গঠিত হয়েছিল গঠনের আহ্বায়ক কমিটি।
বর্তমানে, কেন্দ্রের নির্দেশনা ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ৩ আগস্ট, রোববার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন কমিটির প্রধান রেজাউল করিম বাদশা। এরপর, দিনটি কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা ও প্রার্থীতালিকাটি চূড়ান্ত হয়।
প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, সাবেক আহ্বায়ক আ.ব.ক. নান্নু, ও আরও বেশ কয়েকজন। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন চারজন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, ও অন্যান্য। এছাড়াও, আটজন মনোনয়ন প্রাথী রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য।
অন্যদিকে, সম্মেলনের আগে, ১০ আগস্ট দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কিছু নেতাকর্মী তাদের প্রার্থীতালিকা নিয়ে বিতর্ক প্রকাশ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ সম্পাদকের পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল। এর ফলে, পরিকল্পিততা ও আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিলেও, নেতাকর্মীদের আশা আসন্ন সম্মেলনে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দলের সামগ্রিক পুনরুজ্জীবনের।