শুক্রবার, ২২শে আগস্ট, ২০২৫, ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২

নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন, প্রধান নেতৃত্বে কে থাকছেন?

নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার, ১১ আগস্ট দুপুর ১টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, এই সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনের আগে জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশিত হয়, যা দলের গৌরব ও শক্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এর পাশাপাশি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সকল সেনা ও জুলাই আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভার প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তিনি দলের নতুন দিকনির্দেশনা প্রদানসহ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এছাড়াও, বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।

দিবসের দ্বিতীয় অংশে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, যা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। এই ভোটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য ১৪টি ইউনিটের মোট ১ হাজার ৪১৪ জন ভোটার গোপন ব্যালটে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করবেন। এবারের সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দুই সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও উৎসাহ ব্যাপক।

দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এই জেলা বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। একদিকে বিভিন্ন ভবনে নতুন নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড সজ্জিত, অন্যদিকে ১৭ বছর ধরে চলা হামলা, মামলা ও কারাবরণের অভিজ্ঞতা পেছনে ফেলে নতুন নেতাদের নেতৃত্বে দলের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা দেখা দিয়েছে।

নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে, কাদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে বিএনপি। কেউ মনে করেন, যারা রাজপথে দীর্ঘ সময় ধরে দলের জন্য কাজ করেছেন, অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারাই নেতৃত্বে আসার যোগ্য। আরেকদিকে, তৃণমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নির্বাচন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীর আশা—নতুন নেতৃত্ব হিসেবে এমন ব্যক্তিরাই আসবেন যারা দলপ্রিয়, রাজপথের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং দলের মূল আদর্শকে অটুট রাখতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১০ সালে এই জেলার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়, এরপর কোনো পরিষদ গঠন ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে অভিনবভাবে কাজ করে আসছিল জেলা বিএনপি।

পরবর্তীতে, ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় গত ৩ আগস্ট একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় এবং পরের দিন মনোনয়নের জন্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

মনোনয়নের প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন—সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, মাসুদ হাসান তুহিন, ও অন্যান্য। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন—বায়েজিদ হোসেন পলাশ, মামুনুর রহমান রিপন, শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এছাড়াও, সাংগঠনিক পদে আটজন মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সম্মেলনের প্রথম দিকে কিছু পদপ্রত্যাশী নেতা সাধারণ সম্পাদকের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে প্রত্যাহার ঘোষণা দেন, যা তাদের জন্য রাজনৈতিক এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার। এই সম্মেলন নিরাপত্তা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপুর্ণ। এবারের সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন হলে নতুন নেতৃত্ব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে, যা আগামী বিএনপি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে একটি নতুন ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন