জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় ২,৭০০-এর বেশি বন্দি কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে এখনো পর্যন্ত সাত শতাধিক বন্দি পলাতক রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কারা মহাপরিদর্দশক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। তিনি জানান, এর মধ্যে জঙ্গির সংখ্যাও রয়েছে নয়জন, যারা এখনো থাকছেন বাইরে। এছাড়া, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা হচ্ছে ৬০ জন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
কারা মহাপরিদর্শক আরও জানান, পলাতকু অস্ত্রের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ২৯টি উদ্ধার সম্ভব হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কার্যক্রম জোরদার করে অব্যাহতভাবে পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে আলচনা করে জানা গেছে, কারাগারে বর্তমানে রাজনৈতিক বন্দি বা ভিআইপি বন্দি থাকেন না। কারণ এই ধরনের কোনো মামলা বা অভিযোগের ভিত্তিতে কারাগারে কাউকে নেওয়া হয়নি। যাঁরা এখন সেখানে আছেন, তাঁরা সবাই অপরাধী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মামলা দিয়ে আটক—এবং ভিআইপি বন্দির ধারণাও অবৈধ হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, বর্তমানে কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ১৬৩ জন, আরও ২৮ জন এ জন্য আবেদন করেছেন, তবে তাদের অনুমোদন হয়নি।
এছাড়াও, কারা সেন্টারগুলো নিয়ে বিশেষ পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কারাগার নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সংশোধনমূলক প্রকল্পের গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি মাদকবিরোধী কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গত এক বছরে ২৯ জন মাদকসেবীকে মাদক বহন ও সরবরাহের অভিযোগে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কারাগার নিজস্ব ডোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করেছে।
কারা মহাপরিদর্শক আরও বলেন, দুর্নীতি ও নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কঠোর। বিগত এক বছরে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, কারচুপি বা চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে বিভিন্ন সংশোধনমূলক কর্মসূচি চালু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বন্দীদের খাবারের প্রোটিন পরিমাণ বাড়ানো, খাদ্যসামগ্রী উন্নত করা, এবং বিশেষ দিনগুলোতে খাদ্য বরাদ্দ বৃদ্ধি।
বন্দিদের জন্য উৎপাদনমুখী উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিরাপদ স্থানে ‘কারেকশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা কারাগারে থেকেই অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এই উদ্যোগের ফলে সরকারের রাজস্ব সঞ্চয় হবে এবং বন্দিরা পরিবারের জন্য অর্থ পাঠাতে সক্ষম হবেন।
মোতাহের হোসেন জানান, প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার জনবল কারাগারে অবস্থান করেন। এদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ হাজারের জন্য উৎপাদনমুখী কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হলে, এটি সরকারের জন্য লাভজনক হবে এবং বন্দিরাও পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা হয়ে উঠতে পারেন।
ইতোমধ্যে কারাগারে থাকা গোপন অস্ত্র, মাদক, এবং বন্দীদের মধ্যে ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এর জোরদার স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে কোটি টাকা অর্থ উদ্ধারসহ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
চিকিৎসা সেবার প্রসঙ্গে, বর্তমানে কারাগারে ১৪১ জন নিয়মিত চিকিৎসক ও ১০৩ জন অস্থায়ী চিকিৎসক কাজ করছেন। এছাড়া, কারাবন্দিদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত жүргізা হয়।
সব ধরনের সেবা ও ব্যবস্থার মান বাড়ানোর পাশাপাশি কারাগারগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স, এবং আবাসন সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখনো অনেক ক্ষেত্রে অমিল রয়ে গেছে। কারা বিভাগের আধিকারিকরা এসব চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।