বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের পলায়নের পর বিএনপিকেও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করতে দেশি-বিদেশি মহলের প্ররোচনায় আবারও একটি নতুন ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ সক্রিয় হয়েছে। তিনি বলেন, এই অপচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।
এক সাক্ষাৎকারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আব্বাস উল্লেখ করেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, খাগড়াছড়ির সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে কেন্দ্র করে কিছু গোষ্ঠী অশুভ উদ্দেশ্য সাধনে লিপ্ত, যা দেশের স্বাধীকার এবং স্থিতিশীলতার জন্য চরম হুমকি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানান, কিছু রাজনৈতিক দল বিভ্রান্তিকর অজুহাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে আনছে, যাতে তাদের স্বার্থে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না হলে দেশকে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এখন দেশে এক নতুন ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ চালু হয়েছে, যা ১/১১ সময়কার সেই একই ধারণার মতোই, তবে এবার ভিন্ন রূপে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ভিন্ন আকারে এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আব্বাস অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু গোষ্ঠী বিএনপিকে ‘খারাপ’ বা ‘অবিশ্বস্ত’ হিসেবে দেখানোর জন্য ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে, যা দেশের ঐক্য বিনষ্ট করার অপচেষ্টা। তিনি বলেন, কিছু আওয়ামীপন্থি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিএনপিকে দুর্বল করে তোলার জন্য সক্রিয়, কারণ তারা মনে করছে, দেশের বাইরে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা কেবল তাদের হাতে গেলে সুবিধা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারা বিভিন্ন ছদ্মবেশে নতুন করে এই ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়নে লিপ্ত। এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় রয়েছে। আব্বাস দাবি করেন, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক সরকারি কর্মকর্তারা মিথ্যা উসকানি দিয়ে বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, কারণ তাদের স্বার্থ রয়েছে।
তিনি সাবধান করে বলেন, এমনকি কিছু রাজনৈতিক দলও এই দলে শামিল হয়ে বলছে, বিএনপি দুর্বল হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতা তাদের হাতে থাকবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, ইসলামপন্থী দলসহ কিছু রাজনৈতিক শক্তি বিভিন্ন ইস্যু তুলে এনছে, যা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, একজন দল বলছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত নির্বাচন হবে না, যা ফ্যাসিস্ট আচরণ।
বিশ্লেষণে আব্বাস দেশের জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি, নিজ দেশের মাটি অন্যদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নয়। তিনি মন্তব্য করেন, নতুন ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলা এবং সেন্ট মার্টিন, সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে বিদেশি আলোচনাও একই সূত্রে গাঁথা, কোন ভিন্ন বিষয় নয়।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং হবে। জনপ্রিয়তা থাকায় কিছু মহল দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তবে তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে, মিথ্যা প্রচারণায় এর জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ হবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রশাসন থেকে আওয়ামী লীগের আশপাশের কিছু ব্যক্তিকে সরিয়ে ফেলতে হবে, অন্যথায় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি জানিয়ে দেন, বিএনপি সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে ও ফেব্রুয়ারির ভোটের জন্য অপেক্ষা করছে।
প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর অবশ্যই নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তবে তিনি মনে করেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চোঁট করছে, যা দেশকে বিপদে ফেলতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূসের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের আয়োজনের ঘোষণায় তিনি আস্থা প্রকাশ করেন, বলছেন, ‘আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, নির্বাচন সময়মত অনুষ্ঠিত হবে।’
খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি তার ইচ্ছা ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে, এখনো এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিজেও এ বিষয়ে কিছু বলেননি।’
বিজ্ঞাপন হলে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকলে তার কি ভূমিকা থাকবে—এমন প্রশ্নে আব্বাস জানান, সময়ই বলে দেবে।
অবশেষে, ইসলামি দলের জোট গঠনের বিষয়েও তিনি বলেন, বিএনপি চিন্তিত নয়, বাংলাদেশের জনগণ আসলে উদারপন্থি মুসলিম, যারা ধর্মীয় মৌলবাদ নয়, বরং গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থি দলকেই পছন্দ করে।