কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার বিশাল অংকের টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। চার মাস আঠারো দিনে এই মসজিদের ১৩টি দানবাক্সে জমা পড়েছে মোট ৩২ বস্তা টাকা। দিনভর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সেখানে মোট পরিমাণ টাকা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২৪ টাকা। এছাড়া পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রুপার জিনিষপত্র।
দানবাক্স খোলার এই অনুষ্ঠান সঙ্গোপনে সম্পন্ন হয়নি, বরং এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় সবাই হাজির হন। সকাল সোয়া ৭টায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এরপর ৯টার দিকে মসজিদের দ্বিতীয় তলার বিশাল মেজেতে নিয়ে গচ্ছিত টাকা গোনা শুরু হয়। প্রায় পাঁচ শতাধিক গণনাকারীর যৌথ প্রচেষ্টায় গণনা শেষ হয় সন্ধ্যা ৮টায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মোঃ এরশাদুল আহমেদ। এর আগে, ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল, একই মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হলে পাওয়া যায় ২৮ বস্তা টাকা। সেই সময় গণনার পর মোট টাকা ছিল ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা, সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রুপার দানও ছিল উল্লেখযোগ্য। ওই সময়ের এই অর্থ ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। অনেকের মতে, এই অর্থের পরিমাণ অতীতে অঢেল ছিল। তাছাড়া, টাকা ছাড়াও হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল দান করেছিলেন অনেকেই।
পাগলা মসজিদের সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই গণনায় অংশ নেন পাগলা মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসার ১২০ জন শিক্ষার্থী, আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার ২২০ জন ছাত্র, ৪৫ জন স্টাফ, রূপালী ব্যাংকের ১০০ জন কর্মকর্তা এবং অর্ধশতাধিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য। গণনায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই উৎসাহ ও খুশির মিশ্র পরিবেশে অংশ নিয়ে বলছেন, তাঁরা সবসময় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন কখন দানবাক্স খোলা হবে।
এছাড়া, অনেক দর্শনার্থী ও দানকারীরা এসব দানবাক্স খোলার গণনাকে সরাসরি দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকেও ছুটে এসেছেন। যেমন, হোসেনপুর উপজেলার সিদলা থেকে আসা জাকারিয়া হোসাইন বলছেন, তিনি এই দৃশ্য নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেন। অবশেষে আসা লাইভ অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ বলে মনে করেন।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা নিলুফা রহমান বলেন, দানের বিশ্বাস ও আশা পূরণের জন্য তিনি দীর্ঘদিন এই মসজিদে আসার ইচ্ছে পোষণ করতেন। এবার এই সুযোগে এসে তিনি দান করেছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, দানবাক্স খোলার পর থেকে ব্যাংকে টাকা পৌঁছানো পর্যন্ত সব পর্যায়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে এবং আস্ই অংশে নিজেও উপস্থিত থাকেন।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান জানান, এই টাকার বেশিরভাগই মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ দরিদ্র ও রোগে আক্রান্ত মানুষের সহায়তায় ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি, এই অর্থে একটি আধুনিক ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবনটি হবে দশ তলা উচ্চের এবং এতে নানা ধরনের সুবিধা থাকবে। এর মধ্যে থাকবে শিক্ষার সুবিধা, ধর্মীয় শিক্ষা, পাঠাগার, ক্যাফেটেরিয়া এবং আইটি সেকশন।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য দানা জমা দেওয়ার নকশা ১২টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জমা পড়েছে। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করেছেন। জেলা প্রশাসন ও মসজিদ কমিটি দ্রুত কাজের অর্ডার দিয়ে নির্মাণ শুরু করবে।
বর্তমানে, পাগলা মসজিদের মোট আয়তন প্রায় ৫.৫ একর বলে জানা গেছে। উন্নত প্রযুক্তির ১০ তলার ভবনের জন্য আরও জনসংখ্যা ও জমি দখলের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে মসজিদের অ্যাকাউন্টে দানের অর্থের পরিমাণ ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।