সোমবার, ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৭ই ভাদ্র, ১৪৩২

গাজা ছেড়ে ফিলিস্তিনি পালাচ্ছেন দুর্যোগের মুখে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা এলাকায় ইসরায়েলি্র হামলার কারণে প্রতিদিনই অবস্থা উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হচ্ছে। একদিনে আরও ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪৭ জন গাজা সিটির বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে ১১ জনই রয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন সময়ে। এই তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে।

সংবাদমাধ্যমের মতে, ইসরায়েলি বিমান হামলা ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযানের মুখে গাজা শহর থেকে হাজারও ফিলিস্তিনি পালাতে শুরু করেছেন। সামান্য মালপত্র ট্রাক, ভ্যান বা গাধার ওপর তুলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিমে দেইর আল-বালাহর কাছে অনেক পরিবারের জন্য বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাবু খাটানো শুরু হয়েছে। এইসব পরিবারগুলো বহুবার তাদের ঘরবাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।

গত মাসের শুরুর দিক থেকে ইসরায়েলি সেনারা গাজাতে হামলা জোরদার করেছে, যার লক্ষ্য শহর দখল ও প্রায় ১০ লাখ জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করা—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।

গত শুক্রবার ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজার দখলের জন্য ‘প্রাথমিক ধাপ’ শুরু করেছে এবং এলাকাকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ বলে ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে, হাসপাতাল সূত্রের বরাতে জানা যায়, এই একদিনে গাজা প্রান্তে ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৭ জন নিঃসন্দেহে গাজার মতো শহরাঞ্চলে নিহত। বিশেষ করে, রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন।

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আবাসিক ভবনে হামলার ফলে সাতজন নিহত হন। স্বেচ্ছাসেবকরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে।

আল জাজিরার রিপোর্টার হানি মাহমুদ বলেন, ‘গাজা শহরের চারপাশে হামলার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়িঘর, কমিউনিটি সেন্টার সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ভেঙে পড়ছে। এই পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হচ্ছে, যেখানে মানুষ দুর্ভিক্ষ, অনাহার ও পানির অপূর্ণতার মধ্যে রয়েছেন।’

গাজার চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণে শনিবার লড়াইয়ের মধ্যে এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। তার নাম সার্জেন্ট ফার্স্ট ক্লাস (রিজার্ভ) এরিয়েল লুবলিনার (৩৪)। তিনি চলমান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহত হওয়া ৯০০তম ইসরায়েলি সেনা।

তার মৃত্যু তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দুর্ঘটনাবশত অন্য একজন সেনার গুলিতে তিনি প্রাণ হারান। তিনি উত্তর ইসরায়েলের কিরিয়াত বিয়ালিকের বাসিন্দা। ব্রাজিলে জন্মগ্রহণ করে প্রায় ১০ বছর আগে তিনি ইসরায়েলে এসেছিলেন। তার স্ত্রী তারকা স্পেন থেকে আসা অভিবাসী। তাদের হয়েছে নয় মাসের সন্তান লিওর।

অপর দিকে, শুক্রবার রাতে উত্তর গাজার জায়তুন এলাকায় সাঁজোয়া গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে সাতজন ইসরায়েলি সেনা আহত হন। এই গাড়িটি রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বিস্ফোরক বিস্ফোরণজনিত আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একের অবস্থা গুরুতর। অন্যদের শারীরিক আঘাত সাধারণ। বেশকিছু সেনাকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। জেনারেল সংবাদমাধ্যম কেএএন জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামাসের দায়িত্বরত মুখপাত্র আবু ওবায়দাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় হামাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে আঘাত করার জন্য এই হামলা হয়েছে। যদিও বিস্তারিত কোনও তথ্য প্রকাশ হয়নি, তবে অনেক সংবাদমাধ্যমের দাবি, হামাসের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র হুদাইফা সামির আবদুল্লাহ আল-কাহলৌতকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা উপযুক্ত গোয়েন্দা তথ্য, নজরদারি ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে এই হামলা চালিয়েছে। তবে, হামাস এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

আন্তঃঅঞ্চলের সম্প্রচার মাধ্যমে জানা গেছে, শনিবার ভোরে গাজার আল-রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং বহু নারী, শিশু ও বাস্তুচ্যুত মানুষ আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ভবনটিতে যারা বসবাস করছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সাধারণ মানুষ, যারা এই যুদ্ধের অন্ধকারে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন