সোমবার, ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৭ই ভাদ্র, ১৪৩২

পুতিন ও মোদির সঙ্গে যুক্ত হলো সম্মেলনে যোগদান

রাশিয়া ও ভারতের রাষ্ট্রনায়কদের সাথে প্রায় ২০টি ইউরেশীয় দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা চীনে পৌঁছেছেন। ওদের রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে অংশগ্রহণের উদ্যোগ, যা ডাকে চীনদেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো অঞ্চলভিত্তিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং চীনকে কেন্দ্র করে একত্রিত হওয়া। এই সম্মেলনের শিরোনাম সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও), যা চলবে সোমবার পর্যন্ত। এই কেন্দ্রীয় শহর তিয়ানজিনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়েছে, কারণ এর কিছুদিনের মধ্যেই বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে ৮০তম বিশ্বযুদ্ধের স্মরণে বিশাল এক সামরিক কুচকাওয়াজ। এসসিওর সদস্য দেশগুলো হলো- চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। এর পাশাপাশি আরও ১৬টি দেশকে পর্যবেক্ষক অথবা সংলাপ সহযোগী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তিয়ানজিনে পৌঁছান, সঙ্গে তার একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিদল। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন। চীন ও রাশিয়া বরাবরই এসসিও-কে ন্যাটোর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে। এই সম্মেলন এই বছর প্রথম, যেখানে বিশ্ব অস্থিতিশীলতা বেড়ে চলার মধ্যে উপস্থিত হয়েছে। পুতিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলন ‘সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলায় এসসিও’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, এবং ইউরেশীয় অঞ্চলে সহযোগিতা ও সংহতি জোরদার করবে’। তিনি আরো বলেন, ‘এই উদ্যোগগুলো বিশ্বকে আরো ন্যায়পরায়ণ ও বহুমুখী শক্তির বিশ্বব্যবস্থার পথে নিয়ে যাবে।’ চীনের তাইওয়ান দাবি এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কারণে তাঁরা আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে বড় ধরনের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে বেইজিং ও মস্কো এসসিও-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডিলান লো ব্যাখ্যা করেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরে এসসিও-কে পশ্চিমবিরোধী শক্তিশালী জোট হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তারা দাবি করে এই জোট তৈরি করছে এক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যা আরো গণতান্ত্রিক।’ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের এবারের সম্মেলন সবচেয়ে বড়, যেখানে অংশ নিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ ২০ জনের বেশি শীর্ষ নেতা। লো জানায়, এত সংখ্যক দেশের অংশগ্রহণ দেখিয়ে বোঝা যাচ্ছে যে, চীনের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে এবং এসসিও এখন পশ্চিমা-বিরোধী দেশগুলোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের লিজি লি বলছেন, চীন এর মাধ্যমে তার প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে এবং এই বার্তা দিচ্ছে যে, ইউরেশিয়ায় নিজেদের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং নিজেদের নিয়মে খেলা চলে। তিনি যোগ করেন, ‘চীন এটিকে সার্বভৌমত্বের অধিকার, হস্তক্ষেপের অভাব এবং বহুমুখী শক্তির ভিত্তিতে গড়া এক আলাদা ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা একটি আদর্শ মডেল হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।’ শনিবার তিয়ানজিনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পুতিন সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সাথে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যেখানে লক্ষ্য হবে ইউক্রেনের সংঘাত এবং ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা। জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ লিম তাই ওয়েই বলেন, ‘বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া তার জন্য এসসিও গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে এবং এতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপারে তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাশিয়া চাইছে ভারতকেও নিজেদের পক্ষে টানতে, কারণ হোয়াইট হাউসের যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তির কারণে ভারতের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জটিলতা বাড়ছে।’ এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত, যখন রাশিয়া থেকে তেল কিনতে গিয়ে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া শীল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতিমধ্যে এই সফরে এসেছেন, যা ২০১৮ সালের পর তার চীনের প্রথম স্তরের সফর। এই দুই বৃহৎ দেশের মধ্যে সম্পর্ক বিগত বছরগুলোতে নানা টানাপড়েনে ভরা ছিল, ২০২০ সালে সীমান্তে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে গত বছর মোদীর রাশিয়া সফর ও সি এর সঙ্গে প্রথম দেখা এই সম্পর্কের বরফ গলাতে কিছুটা সাহায্য করেছে। এই সম্মেলন মূলত বিশ্ব শান্তি, সহযোগিতা এবং উন্নয়নের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন