শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত, এক দিনে নিহত ৭৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী অপ্রীতিকর হামলা অব্যাহত রেখেছে। শুধুমাত্র এক দিনে এতে কমপক্ষে ৭৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৪ জনই গাজা শহরেই। শুক্রবার আল জাজিরা সংবাদমাধ্যম এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাদের নির্বিচার বোমাবর্ষণে গাজা শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে। আতঙ্কে মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু পুরো উপত্যকাজুড়ে নিরাপদ আশ্রয় এখনও খুঁজে পাচ্ছেন না। দখলদার বাহিনী দীর্ঘ ২৩ মাস ধরে এই মারাত্মক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ইতোমধ্যে গাজাকে ‘আতঙ্কের নগরী’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। গত বৃহস্পতিবার তাল আল-হাওয়া এলাকার একটি তাঁবুতে হামলায় এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে তিনজনই শিশুর।

হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপের সামনে ভাঙাচোরা মালপত্র নিয়ে মানুষ জট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে। বিস্ফোরণের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এক তাঁবুর সামনে রক্তমাখা এক গোলাপি রঙের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ইসরা আল-বাসুস এএফপিকে বলেছিলেন, ‘আমি ও আমার সন্তানরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বোমা পড়ে, শরীরে টুকরো এসে লাগল। আমার চার সন্তান আতঙ্কে চিৎকার শুরু করল।’

গাজা শহরের জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকার ভয়াবহ বোমা বর্বরতার খবর পাওয়া গেছে। তুফাহ এলাকায় অন্তত আটজন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন, জানান সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল।

শুজাইয়ায় একটি বাসভবনে বিমান হামলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আর জেইতুনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আল-ঘাফ পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেছেন, মানুষ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিরাপত্তার খোঁজে পালাচ্ছেন, কিন্তু যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে ইসরায়েলি বিমান ও গোলাবর্ষণের গোপন বুদ্ধি থাকছে।

ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেছেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ লুকোচুরির মাঝে পড়েছেন এই ভয়, পালানোর কষ্ট এবং মৃত্যুর কাছে। শুধুমাত্র গত বৃহস্পতিবারে গাজা শহরে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন।

ইসরায়েলি সেনাদের তথ্যানুসারে, বর্তমানে গাজা শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রনে আছে। তারা আরও জোরদারভাবে অভিযান চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আল জাজিরার স্যাটেলাইট ছবি অনুসারে, জেইতুন এলাকায় অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান মোতায়েন দেখা গেছে।

গাজা কতটা দখলে, জানাল ইসরায়েলি বাহিনী। নিজেদের দাবিতে জানিয়েছে, বর্তমানে গাজা শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামাসকে দমন করতে তারা আরও শক্তিশালী অভিযান চালাচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফরিন জানিয়েছেন, অভিযান চলমান থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে।

প্রিয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই কমান্ডের গাজা দখলের পরিকল্পনাও অনুমোদন করেছেন এবং প্রায় ৮০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। চলমান এই অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে ‘গিডিওনস চারিয়টস বি’। সেনাদের দাবি, আগের ধাপে গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল, যাতে হামাসের ওপর চাপ বাড়ানো যায়।

অপরদিকে, হামাস এই নতুন অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় আলোচনাকে উপেক্ষা করছে। সংগঠনটি নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে এবং বলে, তাঁদের সঙ্গে কোনও সমঝোতা সম্ভব নয়।

এদিকে, মধ্যস্থতাকারীরা নতুন মানবিক উদ্যোগ নিচ্ছে। হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে বন্দি মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের রিলিজ এবং গাজায় সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব মান্যতা দিয়েছে। তবে, ইসরায়েল এখনো সব বন্দিকে একসঙ্গে মুক্তির দাবিতে অবিচল।

অন্য দিকে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় আল-সাবরা এলাকায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কমান্ডো হামলায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টেবর থেকে এপর্যন্ত কমপক্ষে ৬৪ হাজার ২৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৩ জন আহত। অনেকে ক্ষুধা আর চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।

গাজার প্রতি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এই আন্তর্জাতিক নাগরিক উদ্যোগের উদ্দেশ্য, অবরোধের মাঝে গাজায় প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেয়া ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জোরদার করা।

গাজা উপকূলে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জাহাজগুলো রওনা হয়েছে। প্রথমে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফিরে আসতে হলেও পরবর্তীতে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। তারা তিউনিসিয়াসহ অন্য বিভিন্ন দেশে পৌঁছে মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন