প্রশস্ত রাস্তার উপ্রে গাড়ির গতি মাঝে মধ্যে ঘণ্টায় ১০০ মাইলের বেশি ছাড়িয়ে যায়। রাস্তার দুই পাশে পথচারীর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি, আর যারা চোখে পড়ে, তারা ছুটে চলা, ব্যস্ত। সাধারণত কিসের খেলা বা কবে হবে—এটি গৌণ ব্যাপার হয়ে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিকাংশ মানুষের জীবন থেকে। তবে এই দেশ ইতিহাসে বহুবার এমন বড় আয়োজনে সাক্ষী হয়েছে, যেখানে সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক বিভেদকে বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে। আজ সেই ইতিহাসে আরেকটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো, এশিয়া কাপের মাধ্যমে। এই প্রতিযোগিতা দুটি শহর, আবুধাবি ও দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক চাপানউতোরের কারণে গত মে মাসে এই টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও, এখন ঠিকই শুরু হচ্ছে। ভারতের ভবিষ্যত বড়ো বড়ো টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, তার সাথে অর্থনৈতিক হিসেব-নিকেষও জড়িত। তবে মাঠে, দুই দেশের মধ্যে লড়াই মানেই ক্রিকেটের নানা রকমের লাভ-ক্ষতি। এই লড়াইয়ের কারণে টেনশনের পাশাপাশি প্রচুর অর্থও ঢুকছে বাজেটে। কোনো কোনো টিকিটের মূল্য এখন ১৪ হাজার দিরহাম পর্যন্ত উঠে গেছে, আর সহজে পাওয়া যাচ্ছে না এমন ম্যাচের টিকিট। এই উত্তেজনাপূর্ণ টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ আজই অনুষ্ঠিত হবে। আবুধাবিতে সায়ন্তন সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়), যেখানে আফগানিস্তান মুখোমুখি হবে হংকংয়ের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এই টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানের গুরুত্ব অন্যরকম, কারণ তারা গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। এর আগে আটটি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, তাদের অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলন দুবাইয়ে দুপুরে শেষ হবে, এরপর আজকের ম্যাচে নামবে। বাংলাদেশের দলের প্রথম ম্যাচ হবে আগামী পরশু, হংকংয়ের বিরুদ্ধে। দেশটি তিনবার ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর এবার এক নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই টুর্নামেন্টে প্রবেশ করছে। আসলে, ভারতের মতো দলের জন্য বিষয়টা আলাদা। যদিও এখন নতুন দিনের অপেক্ষা, তবে ক্রিকেটের মহীরুহ শচীন টেন্ডুলকার বা ওয়াসিম আকরাম থেকে শুরু করে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা কিংবা বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান—কেউই আজকের তরুণেরা সেই রকম সংস্কৃতি বা উত্থান দেখাতে পারেননি। এই মুহূর্তে আফগানিস্তান ছাড়া অন্যান্য দলের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দলগুলোও অংশ নেবে। তবে শ্রীলঙ্কার তেমন সুখকর অতীত নেই, তারাও সাম্প্রতিক কালে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সহযোগী দেশগুলো খুব বেশি বড়ো বা দীর্ঘস্থায়ী নয়, কিন্তু ছোট অঘটনগুলো বড় দলগুলোর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। অনেক সময় ছোট ছোট ঘটনা পুরো টুর্নামেন্টের ধারা বদলে দিতে পারে। গ্রুপিং নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন ওঠে, সম্ভবত ভারত-পাকিস্তানের মুখোমুখি লড়াইয়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়া বা ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে অন্য দলগুলোর প্রতি অন্যায় করা হয় কি না। তবে সত্যি বলতে, এশিয়া কাপের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণই হলো এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে টিভিতে ধরা পড়ে যায় এই অঞ্চলের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা, যেখানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অনেক কিছুকেও সংকোচ বিশ্বাস করে এগিয়ে নিয়ে যায়। আগামী ১৯ দিনের এই ক্রিকেট যুদ্ধের প্রত্যাশা সবারই একই—উন্নত মানের ক্রিকেট, উত্তেজনা আর হাজারো রোমাঞ্চ।
