নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগেরข่าว ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে আনন্দের উল্লাস দেখা গেছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দিলে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ পুরো দেশে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। জনতা/r জনতা রাস্তায় নেমে আসে, যেন এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
এরপরই বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুর ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে ও জোড়ে শ্লোগান দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণের ভেতরে কিছু অংশ ভেঙে প্রবেশ করে সেখানে ‘বিজয় পতাকা’ উত্তোলন করে। এই ভবন এখন নেপালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
গত সপ্তাহে, সংঘর্ষের কেন্দ্রে ঘটে ভয়াবহ অপ্রতিরোধ্য পরিস্থিতি। সোমবারের সংঘর্ষে গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ৫০০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অবস্থা রয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করে। কিন্তু এর মধ্যেও জনগণের ক্ষোভে কমে না আসায় তারা বিক্ষোভের পথে বসে। এরপর মঙ্গলবার আবারও রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। এর ফলেই প্রধানমন্ত্রী ওলি ক্ষমতা হারান।
নেপালে চলমান এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত total ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নতুন করে আরও দুইজন নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে সোমনাথগঞ্জের সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্তমানে প্রায় ৯০ জন আহত রয়েছে।
প্রথমে শান্তিপূর্ণ protest চললেও হোচট খেয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। নিরাপত্তা বাহিনী জ読みগান, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলির ব্যবহার করে তোলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে। বিভিন্ন শহরে জারি হয় কারফিউ। তবে জনগণের আন্দোলন যেন থামার নয়। তারা দমে না গিয়ে মঙ্গলবারও পথে নামে। এর ফলে চাপের মুখে, শেষতক, ওলির পদত্যাগ ঘটে।
অলির পদত্যাগের ফলে নতুন জল্পনা শুরু হয়। শোনা যাচ্ছে, তিনি হয়তো দেশের বাইরে পালিয়ে যাবেন বা ভারতে আশ্রয় নেবেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে এই গুঞ্জনের খবর দিয়েছে। বলা হচ্ছে, দেশ ছাড়তে হলে অলির সম্ভবত গোপন ব্যবস্থা নিতে পারেন। এমনকি কিছু ফ্লাইট থাইল্যান্ড ও চীনের দিকে উড়ে গেছে বলে জানা গেছে, তবে অলির নাম এ তালিকায় রয়েছে কি না, স্পষ্ট নয়।
অপরদিকে, প্রতিবেশী ভারতও এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, নেপালের ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নেপাল আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী; তাই আশা করি, সব পক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান খুঁজবে এবং অস্থিরতা কমানোর জন্য দায়িত্বশীলতা দেখাবে। পাশাপাশি, ভারতের প্রশাসন তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দেশের বিভিন্ন অংশে অবস্থানরত ভারতের নাগরিকদের অযথা ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
প্রশাসন সতর্কতা জোরদার করায় পশ্চিমবঙ্গের পানিটাংকি সীমান্তেও সুরক্ষা ব্যবস্থা কড়া করা হয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে এবং সীমান্ত দিয়ে চলাচল মনিটরিং করছে। এই সংকট এখন শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, এটি আঞ্চলিক অস্থিরতার কারণও হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অলির দেশ ছাড়ার ভবিষ্যতীন পরিস্থিতি এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।
প্রবক্ষতেও উঠে এসেছে, কিছু বিক্ষোভকারী তাকে হিটলার হিসেবে ব্যঙ্গ করেছেন। বিষ্ণু থাপা ছেত্রি, একজন শিক্ষার্থী, বলেন, দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমি রাস্তায় নেমেছি। আমাদের দেশের পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয়েছে যে তরুণরা থাকতে ভয় পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি হলো জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতির অবসান ঘটানো।
নিরাপত্তা বাহিনী ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের নানা চিত্র। নারায়ণ আচার্য, একজন বিক্ষোভকারী, বলেন, আমাদের সহপাঠীদের হত্যায় আমরা গভীর ক্ষুব্ধ। আমাদের দাবি, ন্যায়বিচার প্রদান ও বর্তমান সরকারকে সরানো। অন্য শিক্ষার্থীরা বলছেন, যত দিন এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে, ততই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।