মঙ্গলবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১লা আশ্বিন, ১৪৩২

আধ্যাত্মিকতার আড়ালে গোপালপুরের জুগীর ঘোপায় গোপন মাদক ব্যবসা

যমুনা সেতু থেকে সরিষাবাড়ী রেললাইনের পশ্চিম পাশের গরিল্যা বিলের মাঝের একটি ছোট দ্বীপ, স্থানীয়দের কাছে পরিচিত “জুগীর ঘোপা” নামে। এটি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের মোহাইল গ্রামে অবস্থিত। এই দ্বীপটি নিয়ে আধ্যাত্মিকতা, অলৌকিক কাহিনী ও স্থানীয় কিংবদন্তির মতো নানা গল্প শোনা যায়, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো এখানকার গোপন মাদক ব্যবসা। কিছু অসাধু চক্র এই দ্বীপটিকে তাদের অপকর্মের কেন্দ্রবিন্দু করে রেখেছে, যেখানে অবাধে জুয়া, মাদক বিক্রি ও সেবন চলে। তাদের এই অবৈধ কার্যকলাপ অনেক আগে থেকেই চলে আসছে, কিন্তু সম্প্রতি অনিয়মগুলো আরও বেড়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই দ্বীপের আড়ালে স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র বসে গোপনভাবে জুয়ার আসর চালায়, মাদক বিক্রি করে, মাদক সেবনের আয়োজন করে এবং পলাতক আসামিদের আশ্রয় দেয়। এর জন্য তারা বেশ কিছুদিন আগে ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চার চালা টিনের ছাউনি, পাকা দেয়াল ও ফ্লোরসহ একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়, যাতে তাদের কার্যক্রম আরও গোপনীয়ভাবে চালানো যায়। এই দ্বীপে প্রবেশের জন্য একমাত্র পৌঁছানোর উপায় হলো নৌকা, অন্য কোনো মাধ্যমে এখানে আসা কঠিন। অনুমান অনুযায়ী, প্রতি বৃহস্পতিবার এই দ্বীপে সবচেয়ে বড় গাঁজা সেবনের আসর বসে। এই দিন যেন নিচে কোন বন্ধুত্ব বা নিয়মের বাধা নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মাদকসেবী, তরুণ এবং যুবক, নৌকায় করে আসেন এই টোপিয়ার দ্বীপে। এসব দিনে তিনটি নৌকা লাগাতার সারাদিন চলাচল করে, সারা উপজেলা ও আশপাশের এলাকার নানা গ্রাম থেকে আসা মানুষ এই মাদক উৎসবে যোগ দেয়। ওই দিন মাঠে মান্নতের খিচুড়ি বিতরণও হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই মাদক ব্যবসায় জড়িত সংগঠনের মাধ্যমে অসংখ্য তরুণের 미래 নষ্ট হচ্ছে। পাশপাশি গোছা গোছা মাদক বিক্রি ও সেবনের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে, বিশেষ করে রেললাইনের আঘাতের জন্য ব্যবহৃত ক্লিপ ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি করে বিক্রি করা হয়।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, মোহাইল গ্রামের কিছু যুবক ও ছাত্রের একটি দল আগেও এই মাদকবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী চক্রের কারণে তারা পিছিয়ে যায়। এই চক্রটি বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা নিয়ে দাপটের সঙ্গে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি এই অবৈধ কার্যকলাপের কড়া বিরোধিতা করি। তবে ওই এলাকায় শতাব্দীপ্রাচীনভাবে চলা এই ব্যবসার ব্যাপারে জানতে পারলে আরো বিস্তারিত বলতে পারব।”

সন্দেহভাজনদের সঙ্গে সরেজমিন দেখা যায়, ঘরের ভিতরে চারটি দলের গোষ্ঠী ও বাইরেও বিভিন্ন গ্রুপ গোপনে জুয়া, গানের আড্ডা ও মাদক বিক্রির জন্য গোল হয়ে বসে আছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা গাঁজা ও তার প্রস্তুত সামগ্রী সরবরাহ করছে। কোনও সন্দেহজনক দর্শক দেখতে পেয়ে কিছু মানুষ সতর্কতা অবলম্বন করে নজরদারিতে রাখে।

অপর একটি অজানা সূত্র জানিয়েছেন, এই দ্বীপের গাছের ডাল ভাঙলে মানবদেহের সাথে রক্তক্ষরণ ও মৃত্যুর কাহিনী প্রচলিত। তবে উঠে আসা খবরের সত্যতা প্রমাণ হয়নি।

নৌকা চালক চান মিয়া জানান, এই দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ সেখানকার একজন প্রফেসরের বাবার হাতেই রয়েছে; তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তার নাম তিনি জানাননি।

গোপালপুর থানার ওসি গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে কোনও তথ্য তার কাছে নেই, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

লোকমুখে প্রচলিত কল্পকাহিনী হলো, এই দ্বীপে কোনও অনুষ্ঠানের জন্য যদি বাসন-কোসন নগ্ন গায়ে ও পায়ে প্রার্থনা করে আনতে হয়, তা অবিলম্বে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ধরনের গল্পের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যা হয়তো কল্পনা বা জনশ্রুতি।

পোস্টটি শেয়ার করুন