ভারতের বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে, রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো এ বিষয়কে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে এবং বলছে, এই প্রক্রিয়ায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনের ফল নিজেদের পাশে রাখতে চাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ গেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, এর এক-তৃতীয়াংশই মৃত, বাকিরা অন্যত্র চলে গেছেন বা একাধিক তালিকায় নাম থাকায় তাদের নাম বাদ পড়েছে। তবে বিরোধী পক্ষ এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয়। তারা প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে, রাজধানী নয়াদিল্লিতে কিছু ব্যক্তিকে জীবিত থাকার পরও মৃত দেখানো হয়েছে, যাদের অন্যান্য নথিতে জীবিত অবস্থায় দেখা গেছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এ ব্যাপারে ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেছেন, আমি শুনেছি, আপনারা বেঁচে নেই বলেও তালিকা থেকে বাদে ফেলেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, বাদ পড়া ভোটারদের বড় অংশই মুসলিম ও বিজেপির বিরোধী। তেজস্বী যাদবসহ বিরোধী নেতারা মনে করছেন, অনুমান অনুযায়ী প্রতিটি আসনে ২৫–৩০ হাজার ভোটারের নাম কেটে ফেলা হয়েছে, যা গত নির্বাচনের জেতার ব্যবধানের থেকেও বেশি। এভাবে ভোটার তালিকা বদলের মাধ্যমে সামগ্রিক নির্বাচনী সমীকরণ পাল্টে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে তারা অভিযোগ করছেন।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভোটারদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ১১ ধরনের নথি গ্রহণ করা হয়, কিন্তু প্রথমে অবশ্যই ভোটার আইডি কার্ড ও আধার কার্ড স্বীকৃতি পাননি। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধারকে বৈধ নথি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, মাঠে দেখা গেছে, অনেক কর্মকর্তা অনুমানভিত্তিক পদ্ধতিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যেখানে অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের ছবি বা পুরোনো তালিকা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, এই সব বিষয় নিয়েও ব্যাপক সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, দ্রুত এই প্রক্রিয়া মূলত মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারদের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ করতে আগুনে তেল ঢালা। রাহুল গান্ধী বলেছেন, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকসহ অন্যান্য রাজ্যেও এই ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য দায়ী অনিয়ম।
অপরদিকে, বিজেপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের নেতা অনুরাগ ঠাকুর দাবি করেছেন, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোই ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করছে, যাতে তারা তাদের “অনুপ্রবেশকারী” ভোটারদের সংখ্যার বাড়াতে চায়।
সাধারণ ভোটারদের জন্য পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠছে। যারা রাজ্যের বাইরে কাজ করেন, যাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটের ব্যবহার কম বা নেই, তাদের জন্য নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ জানানো একেবারেই কঠিন।
পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর নাম তালিকা থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে বাদ পড়েছে। তিনি সংশোধনের চেষ্টা চালাচ্ছেন, তবে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, অসচ্ছল ও কম সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল সহজে সংশোধন হওয়া সম্ভব নয়।
এখানে উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুসারে, আগস্টের শেষ নাগাদ মোট ৭ কোটি ২০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৯৮ শতাংশের নথি জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাচাইয়ের জন্য কোন নথি প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কমিশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হয়নি। বিরোধী পক্ষ ইতিমধ্যেই ভারতের সুপ্রিম কোর্টে অব্যাহত শুনানি চালাচ্ছে, এবং আশা করা হচ্ছে, নভেম্বরের আগে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে সবাই আশঙ্কা করছে, এমন সময়ের মধ্যে বহু মুসলিম ও বিরোধী ভোটারের ভোটাধিকার ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।