শুক্রবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২

ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীতে তিন বছরে শুধু একটি কারখানা উৎপাদন শুরু

কিশোরগঞ্জের ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মাত্র একটি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে ২৩৪টি প্লটের মধ্যে বড় অংশই পড়ে আছে ফাঁকা বা কাঁশবনের মধ্যে, যেখানে এখনো শিল্পকার্যনির্মাণের স্থান বোঝাই যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত বাকি সব কারখানা চালুর জন্য তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে বিস্তীর্ণ এই শিল্পনগরীতে বড় বড় নির্মাণাধীন কারখানার দেখা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মেসার্স জিলানী ফ্লাওয়ার মিলস অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি কারখানা ইতিমধ্যে উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। তবে এখানেও বেশিরভাগ প্লটের চারপাশে এখনো কাঁশবন বেড়ে উঠেছে, এবং বিকশিত হচ্ছে ফুলের দৃষ্টিনন্দন রোচক দৃশ্য, যেখানে প্রকৃতপক্ষে কোনো কর্মচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায় না।

২০১৩ সালে সরকার ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ৪০ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়, কিন্তু নানা জটিলতা ও বিলম্বের কারণে নির্মাণকাজ কার্যত দেরিতে শুরু হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তবে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের জন্য আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি এখনো।

প্লট বরাদ্দের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কেবল মাত্র একটি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। অন্য আটটি কারখানার জন্য কাজ এগোচ্ছে, এবং নির্মাণাধীন সাতটি কারখানাও চলমান। তাছাড়া, ১৮টি কারখানা নির্মাণের জন্য প্রস্তুত বা অপেক্ষায় রয়েছে। তীব্র উদ্বেগের কারনে আরও ২২ প্লট এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি।

ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীতে মোট ১২৪টি শিল্প ইউনিটে ২৩৪টি প্লট বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে ৪০টি, বস্ত্রে তিনটি, রসায়নে ৪০টি, চামড়া ও রাবারে ২২টি, প্রকৌশল শিল্পে ১৪টি এবং প্যাকেজিংয়ে পাঁচটি প্লট বরাদ্দ হয়েছে।

অর্জিত তথ্য অনুযায়ী, যদি সব কারখানা চালু হয়, তাহলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে এলাকার অর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নত হবে, আর ভৈরবের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান পরিবর্তিত হবে। উল্লেখ্য, এই অঞ্চলের প্রধান পেশা পাদুকা শিল্পের জন্য বিশেষ উপযোগী সুবিধাও রাখা হয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণসহ সকল প্রকার সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মিলাত মিয়া জানিয়েছেন, বিসিকের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় এই এলাকায় রাতে অপরাধ বেড়ে যায়। ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে জনজীবন অচল হতে থাকেছে।

কালিকা প্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে আমাদের আবদার, যেন দ্রুত বিসিকের সব কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর ফলে এলাকাবাসীর বহু সমস্যা সমাধান হবে ও বেকারত্ব কমে আসবে।’

ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ মন্তব্য করেন, ‘তিন বছরে মাত্র একটিই কারখানা উৎপাদনে এসেছে। অন্য সব প্লট এখনও স্থাপনা হয়নি বা কাজ শুরু করেনি। যারা বরাদ্দ পেয়েও কাজ করেনি, তাদের প্লটের মালিকানা বাতিল করে নতুন বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।’

ভৈরব শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবিদুর রহমান খান জানান, ‘কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে পুরোপুরি বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগবে। আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন পর্যাপ্ত জনবল না থাকা ও নিরাপত্তার সমস্যা। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি; আশা করছি দ্রুত সব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

অপরদিকে, ১৭ আগস্ট বিসিক জেলা কার্যালয়, কিশোরগঞ্জ আয়োজিত ‘শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্স (১ম ব্যাচ)’ এর উদ্বোধন হয়। এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হ’ল হাওরপাড়ের তরুণ-তরুণীদের স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিসিকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ সাইফুল ইসলাম, যিনি বলেন, বিসিক সারা দেশে নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি ও তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের দৃঢ় মনোবল, উদ্ভাবনী ভাবনা ও শেখা জ্ঞান কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, সফল উদ্যোক্তা হতে হলে বলিষ্ঠ মনোভাব দরকার।

দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে, বিসিকের চেয়ারম্যান বিসিক শিল্পনগরী, কিশোরগঞ্জ এবং ভৈরব পরিদর্শন করেন। তিনি সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন