গাজায় গত কিছু দিন ধরে ইসরায়েলি সেনাদের জোড়া হামলা অব্যাহত রয়েছে। একদিনের মধ্যে এই অবরুদ্ধ উপত্যকায় কমপক্ষে ৮৩ ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬১ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। সামরিক অভিযানের এই নতুন ধাপে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই, যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংযতভাবে নিন্দা জানাচ্ছে। খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত হামাসের শরিক জিম্মিদের মুক্তি ও সংগঠনের শক্তিশালী ঘাঁটি দখল লক্ষ্য করছেন। তবে এটি বিশ্বের অন্যতম সংকটজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা যায়, উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সেনারা লাখো বাসিন্দাকে কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে ঠেলে দিতে চাপ সৃষ্টি করছে। তবে এই অভিযান শুধু চলমান নয়, এটি ভয়াবহ নারী ও শিশুসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।
গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তাজা ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, শতশত ইসরায়েলি ট্যাংক ও সামরিক যান ব্যাপকভাবে চলাচল করছে। তারা মূলত শেখ রাদওয়ান এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চারপাশে ধূম্রস্ত কুণ্ডলী তৈরি করে মেঘের মতো ধোঁয়া উড়িয়ে এগিয়ে চলা এই সেনাদের দ্বারা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে হরহামেশা। ঐ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকাটি বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ, যেখানে আগে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করতেন।
ইসরায়েলের এই বাহিনীর মূল লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে থাকা লুকানো জিম্মির মুক্তি ও তাদের শক্তিশালী ঘাঁটিগুলোর দখল নেওয়া। তবে এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছেন বহু সাধারণ নাগরিক। আন্তর্জাতিক সমাজের শতдержারিতাও এই আগ্রাসনের প্রশংসা করেনি। বরং তারা এই মানবতাবিরোধী কাজের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার পরিস্থিতি এখন ‘অমানবিক ও বিবেকহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন বহু সংস্থা, যার মধ্যে এগিয়ে রয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন ও অক্সফাম। গত বুধবারের অপারেশনের পর আশেপাশের ভবনগুলোতে ভারী বোমা হামলা চালানো হয়েছে, যা চলমান স্থল অভিযান বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ড্রোন ও বিমান হামলার দাপটে জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
বাসিন্দা সাদ হামাদা জানান, তিনি তার পরিবার নিয়ে দ্রুত দক্ষিণে পালিয়ে গেছেন। তাঁর ভাষ্য, ড্রোনের হামলা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে—সোলার প্যানেল, বিদ্যুৎ জেনারেটর, পানির ট্যাংক, এমনকি ইন্টারনেটও। পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, শহরের অধিকাংশ মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়ে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শেখ রাদওয়ান এলাকা ইতিহাসে গাজা সিটির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। সেখানে বহু স্কুল, মসজিদ ও বাজার ছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই এলাকা ব্যাপক বিমান হামলার শিকার হয়েছে। এখন ইসরায়েলের স্থল অভিযান চলাকালে ট্যাংকের উপস্থিতি লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা দুই দিন ধরে গাজা সিটি জুড়ে দেড়শর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। অভিযানে বোমা ও বিস্ফোরক ভর্তি পুরনো সামরিক যানবাহন ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে হামাসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বাসিন্দাদের একজন নিদাল আল শেরবি বলেছেন, গত রাতটি ছিল খুবই ভয়ঙ্কর, ব্যাপক বিস্ফোরণ আর গোলাগুলির শব্দে রাতের ঘুম উড়ে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী শেখ রাদওয়ান, তাল আল-হাওয়া ও সেজাইয়া এলাকায় সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল ও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
বিশ্বদাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের নেতারা সতর্ক করেছেন, এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে মানবিক এলাকাগুলিতে দ্রুত মানবিক সাহায্য পৌঁছানো জরুরি। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে এখানে আরও বিপর্যয় ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।