বুধবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৫, ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩২

আন্তর্জাতিক বাজারে সাড়া ফেলেছে নরসিংদীর কীটনাশকমুক্ত কাকরোল

নরসিংদী, যা সবজির জন্য বিখ্যাত জেলার মর্যাদা পেয়েছে, এখন গ্রীষ্মের প্রিয় সবজি কাকরোল (কাঁকড়া) উৎপাদন ও রপ্তানিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এটি এখন শুধুই স্থানীয় বাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশের বাজারগুলোতে পৌঁছে যাওয়ায় দেশের কথা বলছে। স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এর আকর্ষণীয় চেহারা, উন্নত স্বাদ এবং বিশুদ্ধতা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বেলাবো উপজেলার বারৈচা বাজার এখন কাকরোলের বড় ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন কাকরোল এখানে আসে। শ্রমিকরা অকার্যকর বা বড় আকারের কাকরোলগুলো আলাদা করে ঝুড়ি, বস্তা ও ক্রেটে প্যাকেজ করে বিক্রি করেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন এখানে কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।

নরসিংদীর ছয় উপজেলার মধ্যে শিবপুর ও বেলাবো কাকরোল উৎপাদনে শীর্ষে। গ্রাম থেকে শহরগুলোতে আসা এই কাকরোল বিভিন্ন বড় শহর যেমন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও সরবরাহ করা হয়। এতে করে কৃষক, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা সবাই লাভবান হচ্ছেন।

অপ্রত্যাশিত চাহিদার কারণে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিমান পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা চালান কমে গেছে, তবুও আন্তর্জাতিক বাজারে কাকরোলের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। পাইকারি বাজারে আকার অনুযায়ী কাকরোল কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা সরাসরি বাজারে এনে আরও বেশি মুনাফা লাভ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নরসিংদীতে প্রায় ১,৪৮৫ হেক্টর জমিতে ২৮,৪৭৮ মেট্রিক টন কাকরোল উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত সার ও উচ্চ মানের বীজের সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে সরকার।

কৃষকরা উল্লেখ করেছেন, উৎপাদন খরচ কখনো কখনো বেড়েছে তবে লাভের পরিমাণ এখনও সন্তোষজনক। শিবপুরের সবুজপাহাড় গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের (৪৫) বলছেন, “কাকরোল চাষে বিনিয়োগ কম, মুনাফা বেশি। আমি ২০ শতাংশ জমিতে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ইতিমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছি। আশা করি আরও বেশি লাভ হবে।”

বেলাবোর বিন্নাবাইদের পরিবার থেকে ফাতেমা বেগম (৩৮) জানিয়েছেন, “আমি ৩২ শতাংশ জমিতে কাকরোল চাষ করেছি, এর ফলে আমাদের সংসার চালাতে পারছি এবং সন্তানদের পড়াশোনার জন্যও একটু সুবিধা হচ্ছে।”

শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া (৫৫) বলেন, “সার এবং শ্রমিকের খরচ বেড়েছে, তারপরও কাকরোল চাষ লাভজনক,”

বারৈচা বাজারের আড়তদার আবুল হাসান যোগ করেছেন, “দেশের বিভিন্ন জেলাগার পাইকাররা এখানে এসে বড় আকার ও মানে ভেদে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় কাকরোল ক্রয় করেন।”

স্থানীয় কৃষকদের বিশ্বাস, নরসিংদীর এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, সরকারি সহায়তা ও পরিকল্পিত উদ্যোগ থাকলে বাংলাদেশের সবজি খাত আন্তর্জাতিক বাজারে আরও সমৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, “আমরা কৃষকদের জন্য সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতের পৃথক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কাকরোল এখন আর কেবল স্থানীয় ফসল নয়, এটি কীটনাশকমুক্ত এবং মানসম্মত উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।”

পোস্টটি শেয়ার করুন