মঙ্গলবার, ৭ই অক্টোবর, ২০২৫, ২২শে আশ্বিন, ১৪৩২

এক বছরে বেড়েছে চাল, ডাল, তেল ও মাংসের দাম

গত বছর এই সময়ের তুলনায় এখন খাদ্যশস্য, তেল, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এসব মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়ছে। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে একই সময়ে বাজারে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গড়ে বেড়েছে। তবে কিছু পণ্যের দামে কমতি দেখা গেছে যেমন পেঁয়াজ, রসুন ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। একইসঙ্গে সব ধরনের সবজি ও শাকসবজির দামও বেড়েছে।

বিশ্লেষণমত, বাজারে প্রতি কেজি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়, যেখানে গত বছর এই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৬৪ থেকে ৮০ টাকায়। ফলে চিকন চালের দাম গড়ে ৫ থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাঝারি মানের চাল ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বাড়িয়ে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম বেড়ে এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ডালের দামের অগ্রগতি দেখে জানা গেছে, মোটা ডালের দাম কিছুটা কমলেও মাঝারি ও ছোট দানা ডালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, বড় দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। মাঝারি মানের মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। আর ছোট দানার মসুর ডালের দামে বড় ধরনের বৃদ্ধি ঘটেছে, এখন তা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অ্যাংকর ডালের দাম প্রতি কেজিতে কিছুটা কমে এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় আসছে।

আটা ও ময়দার দামে দেখা গেছে, খোলা আটার কেজি মূল্য বেড়ে ৫ থেকে ৭ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকায়। গত বছর এই সময়ে এটি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। খোলা ময়দার দাম আরও ৫ টাকা বাড়ে, এখন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে, যা গত বছর ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।

ভোজ্যতেলের বাজারে সব ধরনের তেলের দাম বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৮ টাকায়, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১৫১ থেকে ১৫৫ টাকা। বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল এখন ১৮৮ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগের তুলনায় প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি। একইভাবে, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এখন ৮৯০ থেকে ৯২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৩০ টাকা বেশি। এর পাশাপাশি, খোলা পাম অয়েল লিটারপ্রতি ১৬ থেকে ১৮ টাকা বেড়ে এখন ১৫৩ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুপার পাম অয়েলের দাম লিটারপ্রতি বেড়ে ১৫৫ থেকে ১৬৬ টাকা হয়েছে। রাইস ব্র্যানের ৫ লিটার তেলের দাম বছর খানেকের মধ্যে ৯০০ থেকে ১,৩০০ টাকায় পৌঁছেছে, অর্থাৎ প্রাথমিক দামের চেয়ে প্রায় ৪০০ টাকা বেশি।

অন্যদিকে, মূল খাদ্যপণ্যগুলোতে কিছুটা সস্তা হলেও মসলাজাত পণ্যগুলোতে দামে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। দেশের পেঁয়াজের দাম এখন ৬৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর এই সময়ে ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। রসুনের কেজি এখন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, যেখানে পূর্বে ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আন্তর্জাতিক রসুনের কেজি ১৩০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারও বেশ চড়া। ঐ সময়ের তুলনায় আর্থিকভাবে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে মাছের দামে। ছোট আকারের ইলিশের দাম এখন কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, যেখানে গত বছর এই সময়ে ছিল ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। বড় আকারের ইলিশের প্রতি কেজির দাম উঠেছে ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা বা তার বেশি, যা গত বছর একই সময়ে ছিল প্রায় ১৫০০-২৩০০ টাকা।

তীব্র মূল্যবৃদ্ধির কারণে অন্যান্য মাছের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। রুই ও কাতলার দাম এখন কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর ছিল ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা। এছাড়া, রাজধানী শহরে সরবরাহের দিক থেকে, প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম বর্তমানে ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকার ওপরে, যা গত বছর ছিল ৯০০ থেকে ১,০০০ টাকা।

সবশেষে, ডিমের দাম সামান্য কমেছে, এক হালি ফার্মের (লাল বা বাদামী ডিম) দাম এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা আগের তুলনায় ৫ থেকে ১০ টাকা কম।

অন্যদিকে, সব ধরনের শাক-সবজির দামও বেড়েছে। শিমের দাম এক সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২৪০ টাকায় পৌঁছেছে, আর কাঁচামরিচের বিক্রিও বেড়ে দেড়শ থেকে দুইশ টাকার উপরে উঠেছে। এই ধরনের বিভিন্ন মৌসুমি ও প্রয়োজনীয় সবজির বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম আরো বেশি হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন