দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমানে ও سابقে কর্মরত ১৯ জন কর্মকর্তা সম্পর্কে বিশদ তথ্য চেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিন সাবেক গভর্নর, বেশ কিছু সাবেক ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তাসহ ভারতীয় দুই নাগরিক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই তথ্যের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। চিঠিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, দায়িত্বের পরিধি, কর্মস্থল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, নীতি লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে তদন্ত চলছে। তালিকায় রয়েছেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার, যারা ওই ঘটনার সময় দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মোহা. রাজি হাসান, এস এম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, আহমেদ জামাল ও বিএফআইইউয়ের সাবেক প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের নামও চাঁদা হয়েছে। বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যেও এই তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক, আইসিটি বিভাগের দেবদুলাল রায়, কমন সার্ভিস বিভাগ-২ এর পরিচালক মো. তফাজ্জল হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্বে থাকা মাসুম বিল্লাহ, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মসিউজ্জামান খান ও রাহাত উদ্দিনের নাম রয়েছে। উল্লেখ্য, মসিউজ্জামান খানের নাম দুবার উল্লেখ করা হয়েছে, তবে দুদক নিশ্চিত করেছে তিনি একই ব্যক্তি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি এক মাসের নোটিশে তার পদ থেকে অবসর নেন। দুদকের অনুসন্ধানকারীরা জানান, রিজার্ভের রক্ষণাবেক্ষণ ও লেনদেন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিভাগে দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা ওই সময় কাজ করছিলেন। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় আর ফেরত আসে দুই কোটি ডলার। ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত প্রায় দেড় কোটি ডলার পরে উদ্ধার হয়েছে। বাকি অর্থের সন্ধানে এখনও ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। এ ঘটনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো—ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট, আইটি, পেমেন্ট সিস্টেম এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং—সরাসরি জড়িত ছিল। ভারতের দুই নাগরিক নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানার তথ্যও এখন তদন্তের অংশ হিসেবে চাওয়া হয়েছে। নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির আগের সময় বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ‘সুইফট’ সংযোগের মাধ্যমে তিন ব্যাংকের লেনদেন পরিচালনা করতেন। রিজার্ভ চুরির পর একটি সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতা তদন্তে আনা হয় এবং কীভাবে টাকা স্থানান্তরিত হলো, তা চিহ্নিত করতে রাকেশ আস্তানাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
