জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তাধীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ নবম দিন সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ মামলায় অ্যাক্টিভ ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ মোট আটজন।
রোববার (৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল এই সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ দিন তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়ার কথা রয়েছে, যা মামলার অপরিহার্য অংশ।
এর আগে, ২৫ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের মতো সাক্ষ্যপ্রার্থনা ও জেরা সম্পন্ন হয়। আবারও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়েছে, এবং এদিন তিনজন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশ সদস্য। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ ও আদালতের পক্ষ থেকে তথ্য নেন আইনজীবীরা। এখন পর্যন্ত এই মামলায় মোট ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে, সাক্ষ্য চলাকালে মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও মামুনুর রশীদ।
আগের দিন, ১৪ আগস্ট, সপ্তম দিনের সাক্ষ্যপ্রক্রিয়ায় তিনজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে দুজন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য—কনস্টেবল অজয় কুমার ও কনস্টেবল আবদুর রহমান।
১১ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্য দেন দুই প্রত্যক্ষদর্শী—নিউমার্কেটের দোকানদার মো. টিপু সুলতান ও নৌবাহিনীর মালামাল সরবরাহকারী মো. মনিরুজ্জামান।
৭ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনে সাক্ষ্য দেন তিনজন, যেখানে একজন ছিলেন শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি। অন্য দুইজন হলেন—আনাসকে গুলি করতে দেখার প্রত্যক্ষদর্শী রাব্বি হোসেন ও ব্যবসায়ী আবদুল গফুর।
২১ আগস্ট চতুর্থ দিনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়, যেখানে শহীদ রাকিব হোসেন হাওলাদারের বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বড় ভাই রাহাত হাওলাদার নিজে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হত্যাকারীদের কড়া শাস্তি চাইছেন।
১৩ আগস্ট, তৃতীয় দিনে, সাক্ষ্য দেন শহীদ ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার, তার প্রতিবেশী শহীদ আহমেদ ও শহীদ মো. ইসমামুল হকের ভাই মহিবুল হক।
১২ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য দেন দুজন—অধ্যাপক আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিন ও শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদের বাবা শেখ জামাল হাসান।
১১ আগস্ট, প্রথম দিন, পুলিশের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বক্তব্য শেষে প্রধান সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ। এখন পর্যন্ত এই মামলায় ১৪ জন জবানবন্দি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত চার আসামি হলেন- সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক থাকছেন চারজন—সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মো. ইমরুল।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল বিচার শুরু করার আদেশ দেয়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর তালিকায় শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরেকের মতো নাম রয়েছে।