প্রায় এক মাসের স্থিতিশীলতার পর আবারও বেড়েছে এশিয়ার স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। ইউরোপে শীতের আগমনের প্রভাবে এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার গ্যাস অবকাঠামোতে হামলার কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। রয়টার্স ও মার্কেট স্ক্রিনারের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সপ্তাহে উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় নভেম্বরের জন্য গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ ডলার প্রতি এমএমবিটিইউ, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০ ডলার ৬০ সেন্ট। ডিসেম্বরের জন্য এই গড় মূল্য আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ ডলার ২০ সেন্ট।
এফজিইর গ্যাস ও এলএনজি সাপ্লাই অ্যানালিটিকস বিভাগের পরিচালক সিয়ামাক আদিবি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘ইউরোপে চোখে পড়ার মত চাহিদা বেড়েছে, কারণ অক্টোবরের শুরু থেকেই শীতের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারে এলএনজির দাম উঠেছে।’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘ইউরোপে গ্যাসের মজুত ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেলেও রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল থেকে সরবরাহ এখনও উচ্চমাত্রায় রয়েছে। তবে এশিয়ার বাজারে চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম, যেখানে মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকা মৌসুমি প্রভাবের কারণে চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। শীতে এলএনজির দাম নির্ভর করবে মূলত ইউরোপের পরিস্থিতির ওপর।’
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস জানিয়েছে, নভেম্বরের জন্য উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে এলএনজির গড় মূল্য ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ ডলার ৩৩ সেন্ট, যা নেদারল্যান্ডসের টিটিএফ ফিউচার চুক্তির তুলনায় ৬৩ সেন্ট কম। অন্যদিকে, আর্গাসের মূল্য নির্ধারণ করেছে ১০ ডলার ৩৬ সেন্ট এবং স্পার্ক কমোডিটিস ১০ ডলার ৩০ সেন্ট প্রতি এমএমবিটিইউ।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের আটলান্টিক এলএনজির ব্যবস্থাপক এলি ব্লেকওয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলায় প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাদুর্ভাব প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়াও অক্টোবরের শুরুতেই ইউরোপে শীতের প্রভাব পড়ে, যার ফলে গ্যাসের মজুত থেকে উত্তোলন বেড়ে গেছে, এটাই দামকে চাপের মধ্যে ফেলছে।’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘বর্তমানে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কম, ফলে শীতকালীন চাহিদা পূরণের জন্য ইউরোপকে বেশি দামে এলএনজি আমদানি করতে হতে পারে।’
অন্যদিকে, আইসিআইএসের সিনিয়র এলএনজি বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফ্রোলি মনে করেন, সেপ্টেম্বর মাসে চীনের এলএনজি আমদানি কমে যাওয়া এবং মিসরের দুর্বল চাহিদা ইউরোপের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
এছাড়াও স্পার্ক কমোডিটিসের বিশ্লেষক ম্যাক্স গ্লেন-ডোয়েপেল বলেছেন, ‘বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে রপ্তানির প্রণোদনা বেশি থাকায় দাম সুবিধা হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সরবরাহের তুলনায় ইউরোপের বাজারে মূল্য বেশি।’
পরিশেষে, এলএনজির পরিবহন খরচও কিছুটা কমে এসেছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত আটলান্টিক রুটে পরিবহন ব্যয় প্রতিদিন ২২ হাজার ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের চেয়ে কিছুটা কম। প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটে এই খরচ স্থির রয়েছে ২৪ হাজার ডলারে।