মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জিতলেন তিনজন অর্থনীতিবিদ

চলতি ২০২৫ সালের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন তিনজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ—জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। তাদের এই পুরস্কার প্রাপ্যতা মূলত উদ্ভাবন নির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাখ্যা করার জন্য। এই তিনজন অর্থনীতিবিদের মধ্যে অর্ধেক অংশের পুরস্কার পেয়েছেন জোয়েল মোকির, যিনি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পেছনের শর্তগুলো নির্ণয় করার জন্য সম্মানিত হয়েছেন। অন্যদিকে, বাকি অর্ধেক পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট, যাদের গবেষণা ‘সৃজনশীল বিনাশ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব প্রদান করে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, এই পুরস্কারের মূল্যমান ১২ লাখ ডলার। নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, নোবেলজয়ীরা আমাদের শেখিয়েছেন যে, সবসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত নয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি স্থবিরতা স্বাভাবিক অবস্থা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে, সম্ভাব্য হুমকিগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করতে হবে। মোকিরের গবেষণায় দেখা গেছে, কিভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উদ্ভাবন একসময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিয়মিত করে তুলেছে। অন্যদিকে, আগিয়োঁ ও হাউইট জটিল গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, যখন নতুন এবং উন্নত পণ্য বাজারে আসে, তখন পুরোনো পণ্য বিক্রি করে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াই অর্থনীতিতে পরিচিত ‘সৃজনশীল বিনাশ’ নামে। এটি মূলত পুরোনো ব্যবস্থার ভেতর থেকে নতুন উদ্ভাবনের জন্ম হয়। পুরস্কারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত দুই শতকের ইতিহাসে যেখানে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঘটনা কম দেখা গেছে, সেখানে এই বছর প্রথমবারের মতো তা দেখা গেছে। এর ফলস্বরূপ, কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং আজকের সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেছেন। এই তিন নোবেলজয়ী দেখিয়েছেন, উদ্ভাবনই ভবিষ্যৎ অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি। তাদের গবেষণা বারংবার প্রমাণ করে যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয় বা নিশ্চিত প্রক্রিয়া নয়। তবে এটি চালাতে হলে গুরুত্বপূর্ণ হুমকি ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত ও মোকাবিলা করতে হবে। উল্লেখ্য, এই অর্থনৈতিক পুরস্কার মূল নোবেল পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত নয়। ১৯৬৯ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে এই পুরস্কার চালু হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৫৭ জন এই পুরস্কার লাভ করেছেন। এটির নামকরণ মূলত আলফ্রেড নোবেলের নামে। সবচেয়ে বেশি বয়সে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন লিওনিড হারউইচ, যিনি ২০০৭ সালে ৯০ বছর বয়সে এই স্বীকৃতি পান। অন্যদিকে, সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী হিসেবে ২০১৯ সালে ৪৬ বছর বয়সে স্বামী অভিজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার অর্জন করেছিলেন এস্থার দুফলো। এবারের বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জোয়েল মোকির, যিনি পুরস্কারের অর্ধেক অংশের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। অপর অর্ধেক ভাগ পেয়েছেন ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। আজিওন বর্তমানে প্যারিসের কোলেজ দ্য ফ্রঁস ও ইনসিয়াড এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্সে অধ্যাপনা করছেন। হাউইটের পরিচিতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর। নোবেল কমিটির সদস্য জন হ্যাসলার বলেছেন, ‘জোয়েল মোকির ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নির্ভরশীল টেকসই প্রবৃদ্ধির উপাদানগুলো চিহ্নিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন—যা এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে নতুন ও উন্নত পণ্য পুরোনো পণ্যকে প্রতিস্থাপন করে দ্রুত বাজারে আসে।’ এই পুরস্কার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক স্বীকৃতি।

পোস্টটি শেয়ার করুন