ভারতীয় নারী ক্রিকেটের আধিপত্য আবারো বিস্তৃত হলো তারকা ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানার মাধ্যমে। তিনি এবার নারী ওয়ানডে ইতিহাসে এক অভিনব কীর্তি গড়লেন, যা বাংলার পাশাপাশি বিশ্ব ক্রিকেটেও আলোচনা পৌঁছে গেছে। নারীদের ওয়ানডে ক্রিকেটে এক বছরেই সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডের মালিক এখন তিনি; এই ফাইনাল রেকর্ডটি নিজেকে আরও উজ্জ্বল করে তুললেন।
গত রোববার, নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম ম্যাচে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়ে তিনি ৬৬ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮০ রান করেন, যা তার অপরাজেয় পারফরম্যান্স। এটি তাঁর অষ্টম অর্ধশতক হিসেবে বিবেচিত, যেখানে তিনি ধৈর্য্য এবং ধাপে ধাপে রান তুলে চলেছেন।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই বছর তিনি ১৮টি ওয়ানডেতে অংশ নিয়ে মোট ১ হাজার ৬২ রান করেন, যার মধ্যে চারটি সেঞ্চুরি এবং ফিফটিগুলির মাধ্যমে রানগুলো গড়ে উঠেছে। তার ব্যাটিং গড় ৫৯, স্ট্রাইক রেট ১১২.৮৫, যা তাকে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া অতিক্রম করে দ্রুততম পাঁচ হাজার রানের মালিক বানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া নারী দলের অধিনায়ক বেলিন্ডা ক্লার্ক পূর্বে এক বছরে সর্বোচ্চ ৯৭০ রান করে ছিলেন, যা এখনো রেকর্ড। তবে মান্ধানা এই বছরে একসাথে আরও বেশির ভাগ রান করে তার অবস্থান আরো শক্তিশালী করেছেন। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার লরা উলভার্ট ৮৮২ রান করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এক বছরে ৯০০ রানের বেশি সংগ্রহের রেকর্ড অন্য কেউ করেননি।
বিশেষ উল্লেখ্য, এই ইনিংসের মাধ্যমে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে পাঁচ হাজার রান পূর্ণ করেন। এটি টি-টোয়েন্টি বা টেস্টের তুলনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্জিত। এই রেকর্ডটি আগে করেছেন পশ্চিম ইন্ডিজের স্টেফানি টেইলর ১২৯ ইনিংসের মধ্যে।
মোট ১১৯ ইনিংসের মধ্যে এই সাফল্য অর্জন করে তিনি শুধু ভারতীয় ক্রিকেটেরই নয়, আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়ে নেন। রেকর্ডটি পাকিস্তানের বাবর আজম ৯৭ ইনিংস ও দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলার ১০১ ইনিংসের মাঝে পড়ে।
প্রথমে তিনি ব্যাটিং শুরু করেন প্রাতিকা রাওয়ালের সাথে, যিনি ৭৫ রান করে ৯৬ বলে। এরপরই দুই ওভারে কিম গার্থকে ছক্কা মারার মাধ্যমে নিজেকে পাঁচ হাজার রানের দৌড়ে পৌঁছে দেন। তিনি ৪৬ বলে ৫০ রানে পৌঁছে যান, যেখানে মোট ৭টি চারের পাশাপাশি একটি ছক্কাও ছিল। আরেক ওপেনার সোফি মলিনিউকে ডিপ মিডউইকেটে আকাশে ছক্কা মারার পরে এই রেকর্ড স্পর্শ করেন।
ম্যাচের ২৫তম ওভারে, ধৈর্য্য আর পরিশ্রমের সঙ্গে রান সংগ্রহের এই কীর্তি শেষ হয়। কিন্তু ইনিংসের শেষের দিকে, মলিনিউয়ের স্লগ সুইপে ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন মান্ধানা। এই বিপজ্জনক সময়ে তিনি ৭৫ রান করে ৯৬ বল খেলে থাকেন। এরপরই, কিম গার্থের এক ছক্কায় ঐতিহাসিক এই লক্ষ্য সহজেই অতিক্রম করে যান।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বড় স্কোর গড়ে দেশকে ভাল অবস্থানে রাখার পাশাপাশি এই রেকর্ড আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তার সাবলীল ব্যাটিং এবং ধারাবাহিকতা নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা জোগায়। স্মৃতি মান্ধানার এই অসাধারণ কীর্তি বাংলায় গর্বের বিষয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে অক্ষরজৌলুসের दर्जা পেয়ে গেছে।