বৃহস্পতিবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০২৫, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২

ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন, প্রধান উপদেষ্টা জানান

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, জুলাই মাসে স্বাক্ষরিত সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা চলছে, যা এই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। বুধবার রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যমত্যের জন্য গঠিত কমিশনের ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা জানান।

অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এটাই এখন আমাদের অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারের অংশ তো এটাই যে, আমরা গণমাধ্যমে যা ঘোষণা করেছি, তা রক্ষার জন্য কঠোর অবস্থান নেবো। নির্বাচনটি উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে, এই কথাটিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের যেমন এই সনদ তৈরি করে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার ছিল, তেমনি আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো—সবার সঙ্গে একসাথে এক সুন্দর, সফল নির্বাচন সম্পন্ন করা।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশ্বাস, রাজনৈতিক দল ও ঐক্যমত্য কমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় এই পদক্ষেপ সফল হবে। তিনি বলেন, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সব নেতা-নেত্রীরা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে কঠিন বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন এবং সন্তোষজনক সমাধান নিয়ে এগিয়ে গেছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের প্রত্যেকের এই সফলতা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং বিশ্ব পর্যায়ে রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, Juli সনদ রচনাকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী অধ্যায় হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে এই সনদটি যথাযথভাবে লেখা হয়েছে, যা দেশের বৃহৎ সংস্কার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। আর এই কারণে আগস্টের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি আমাদের সবার জন্য এক বিশাল উৎসবের মুহূর্ত হবে।’

তিনি আরও বলেন, যে কলম দিয়ে এই স্বাক্ষর হবে, সেটি জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হবে, যেন ভবিষ্যত প্রজন্মও এই ঘটনাটির স্মৃতি ভুলতে না পারে। তিনি বলেন, ‘মাসের পর মাস এ ধরনের বৈঠক ও আলোচনা অনেক হতাশার মাঝে এসে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু শেষমেষ এই সব অসম্ভব কাজও সম্ভব হয়েছে। তাই এই Juli সনদ আমাদের জন্য এক বিশাল জাতীয় সম্পদ।’

প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তৈরি হওয়া দলিলগুলো হারিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। এগুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হবে যাতে সবাই জানে কেন এ সমস্ত বিষয়ে একমত হয়েছিল। সরকারের দায়িত্ব এই দলিলগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করা। তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে ও বই আকারে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতেও এই দলিলগুলো প্রাসঙ্গিক থাকে এবং সবাই জানতে পারে আমাদের কী লক্ষ্য ও মূল্যবোধের জন্য কাজ করছি।’

তিনি স্পষ্ট করেন, সনদ এবং নির্বাচন আলাদা কোনও বিষয় নয়—এগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। উত্তরণের প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, তার উত্তর এই সনদে রয়েছে। এই উত্তরণের জন্য স্বচ্ছ ও সন্তোষজনক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেইভাবেই আমাদের রূপান্তর সম্পন্ন হবে। আমরা সবাই এ জন্য কাজ করে যাচ্ছি যাতে এই কাজের ফলাফল বাস্তবে রূপায়িত হয়। এ লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল শুক্রবার আমরা পুরো জাতির সামনে এই পরিবর্তনের আশাকে উজ্জীবিত করবো।’

অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, আগামীকাল (১৭ অক্টোবর) একটি উৎসবমুখর এবং অনাড়ম্বর সই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানান, সবাই এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে এবং এই দলিলে সই করবেন, যার মাধ্যমে জাতি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্মৃতি সংরক্ষণ করবে। তিনি বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ এই ঘটনায় গভীর দৃষ্টিতে চর্চা করবেন, তারা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিচ্ছেন, এটি অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

পোস্টটি শেয়ার করুন