শনিবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫, ২রা কার্তিক, ১৪৩২

সরিষাবাড়ীর ৭ রেলস্টেশনের মধ্যে ৩টি বন্ধ, যাত্রীরা দুর্ভোগে

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় নির্মিত সাতটি রেলস্টেশনের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীদের অনেক ধরনের দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশেষ করে, গরিবের ট্রেনখ্যাত ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস (৭৫-আপ, ৭৬-ডাউন) ট্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এই রুটে চলাচলকারী ময়মনসিংহ-ভূঞাপুর লাইনের যাত্রীরা অসুবিধার শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব স্টেশনে চারপাশের পরিবেশ একেবারে জনশূন্য এবং স্থাপনা ভুতুরে হয়ে পড়েছে। স্টেশনের সব কক্ষ তালাবদ্ধ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সাধারণত প্রত্যেক স্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার, সহকারী মাস্টার ও চারজন পয়েন্টম্যান থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কেউ উপস্থিত নেই। এর ফলে টিকিট বিক্রিসহ যাত্রীসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। সরিষাবাড়ী উপজেলায় আন্তঃনগর ট্রেন যেমন যমুনা, অগ্নিবীনা ও জামালপুর এক্সপ্রেস চলাচল করে। এছাড়াও, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস (যা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ), চট্টগ্রাম মেইল ও অন্যান্য কয়েকটি লোকাল ট্রেন চলাচল করছে। এই বন্ধ স্টেশনে কিছু ট্রেন সাময়িকভাবে যাত্রা বিরতিতে থাকলেও অধিকাংশ ট্রেনই এই স্টেশনে আসেন না।

পূর্বের আরও ১৮৯৯ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া বাউসী, বয়ড়া এবং সম্প্রতি নির্মিত শহীদ নগর বারইপটল স্টেশনগুলো জনবল সংকটের কারণে সম্পূর্ণভাবে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্টেশনে বর্তমানে ধান মাড়াই, খড় শোষণ, চুরি, জুয়া, ও মাদকসেবনের মতো অরাজকতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। স্টেশন বন্ধ থাকায় এই মূল্যবান সরঞ্জাম ও বস্তুসমূহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে স্থানীয়জনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অপরদিকে, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও টাঙ্গাইলের রেলপথে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০১২ সালে উদ্বোধন হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ২৮ মে থেকে ইঞ্জিন সংকটের কারণে এই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার যাত্রী খুবই বিপদে পড়েছেন। এই রুটে ট্রেনটি দুপুর ১২:৪০ মিনিটে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে জামালপুর, টাঙ্গাইলের হেমনগর, ভূঞাপুর ও ইব্রাহিমাবাদ স্টেশনে এসে পৌঁছুত। এখন এই রুটে ভাড়া দামের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অন্য যানবাহনে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সম্মানি যাত্রী মঞ্জুরুল ইসলাম ও রিপন মণ্ডল বলেছেন, ট্রেন সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য অন্যতম সস্তা ও নিরাপদ পরিবহন মাধ্যম। তারা দ্রুত ভাড়া এবং নিরাপদ ভ্রমণের জন্য এই ট্রেন চালুর দাবী জানান। কিছু যাত্রীজন যেমন, শহীদ নগর বারইপটল এলাকার সুমন মিয়া ও শাওন আহমেদ বলেন, ‘স্টেশনটি নির্মাণের পর বেশ প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকার স্ট্রাকচার, সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে পড়ছে।’

বয়ড়া স্টেশনের ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে এটির জনপ্রিয়তা ছিল বেশি। ট্রেন যাত্রা এ স্টেশনটিতে বহু বছর ধরে চললেও দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় এখন কোন লোকজন এসে ব্যবসা করে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ে (ঢাকা) এর অতি. মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. নাজমুল ইসলাম ফোনে বলেন, জনবল সংকটের কারণেই অনেক স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ বেশিরভাগ শেষ হওয়ায়, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুদিনের মধ্যে পুনরায় চালু করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন