রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫, ৩রা কার্তিক, ১৪৩২

নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাইয়ের জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে এবং গত ১৬ বছর ধরে চলে আসা নৃশংসতা ও অস্থিতিশীলতার অবসান ঘটাবে। ইউনূস বলেন, ‘‘আজ আমাদের জন্য এক বিশেষ দিন, নতুন একটি অধ্যায়ের শুরু। এই স্বাক্ষরই আমাদের নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল stepping stone।’’ ১৭ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও স্বাক্ষর করেন। এতে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা, এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও তার সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই ঐকমত্যের সুর বাজিয়ে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। যারা এই সনদে স্বাক্ষর করেছেন, তারা পুনরায় বসে আলোচনা করবেন কিভাবে নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে। তিনি বলেন, যারা এই সনদে স্বাক্ষর করেছে, তারা মনে রাখবে যে তাদের স্বাক্ষর একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি হবে। পুলিশ বা অন্য কেউ যদি হঠাৎ করে হস্তক্ষেপ করে, তবে সেটা হবে অপ্রত্যাশিত ও অপ্রয়োজনীয়। এই দিনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা এই সনদের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে মানবতার প্রতি их দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইউনূস আরও বলেন, ঐকমত্যের এই সনদ কেবল রাজনীতিতে নয়, আমাদের সামগ্রিক সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। এই দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্যই এক অনন্য উদাহরণ। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিকল্পনা করে বললেন, বঙ্গোপসাগর আমাদের জাতীয় সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহার হলে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলে ডুবো জাহাজগুলো আমাদের বন্দরে ভিড়বে, আমাদের জাহাজ যেন সিঙ্গাপুরে আটকে না থাকে। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি ও মহেশখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বন্দরের উন্নয়ন হলে, পুরো এলাকাটির অর্থনৈতিক প্রভাব দেখার মতো হবে বলে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, অন্য দেশের জেলেরা বঙ্গোপসাগরের মাছ হাতিয়ে নেওয়ায় আমরা শুধু হা করে দেখছি, তার পরিবর্তে এই সম্পদ উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। এই জন্য বন্দর উন্নতি ও সমুদ্র নিরীক্ষণের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক নতুন যুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বক্তব্যে তিনি তরুণদের সম্ভাবনা, সমুদ্র বন্দরের সুবিধা এবং দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে আলোচনা করেন। শেষ করে তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলেন, যারা জীবন উৎসর্গ করে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটি স্বাভাবিকের বাইরে এক মহান অর্জন। এটি শুধু বাংলার নয়, দুনিয়ার জন্য এক মহান দৃষ্টান্ত। এভাবেই দেশ ও জাতির মুক্তির পথে চলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নতুন দিশা পেয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং গণমানুষের অংশগ্রহণে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সংবর্ধিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মনোভাবাপন্ন দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, যারা এই শান্তিপূর্ণ ঐক্য আর প্রগাঢ় সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে এই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন