কানাডা থেকে রেকর্ডসংখ্যক ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। কানাডিয়ান বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এই সংখ্যাটি আগের সব রেকর্ডকেই ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশটির অভিবাসন ও নিরাপত্তা নীতির নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রথমেই জানা দরকার, চলতি বছর ২৮ জুলাই পর্যন্ত কানাডা থেকে ভারতের মোট ফেরত পাঠানো হয়েছে ১,৮৯১ জন। ২০২৪ সালে পুরো বছর জুড়ে এই সংখ্যা ছিল ২,০০০ এর কাছাকাছি—প্রায় ১,৯৯৭ জন। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬২৫ জন। অর্থাৎ, কয়েক বছরে কানাডা থেকে ভারতে ফেরত পাঠানোর হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এগুলো ছাড়াও জানা গেছে, বর্তমানে কানাডা থেকে ফেরত পাঠানো বেশিরভাগ নাগরিকই মূলত মেক্সিকান এবং ভারতীয়। মেক্সিকানদের ফেরত পাঠানো হয়েছে ২,৬৭৮ জন, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এরপর রয়েছে কলম্বিয়ার নাগরিকরা, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে ৯৮১ জন।
প্রশ্ন হলো, কেন বাড়ছে এই ফেরত পাঠানোর বিষয়টি? এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সম্প্রতি টরন্টোতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, তার সরকার বিদেশি অপরাধীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শক্তিশালী করছে। তিনি বলেন, “আমরা অভিবাসনব্যবস্থায় একাধিক সংস্কার চালাচ্ছি। অপরাধী বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত, কার্যকর এবং নজরদারিতে রাখতে কাজ চলছে।”
তবে এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এখন দেখা যায়, কানাডায় অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। ১০ অক্টোবর পিল রিজিয়নাল পুলিশ (পিআরপি) এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা প্রথমবারের মতো পিল ক্রাউন অ্যাটর্নি অফিস ও কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে মিলেই বিদেশি অপরাধীদের কানাডা থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিচারপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। বিশেষ করে, সম্প্রতি মেইল চুরির অভিযোগে আট ভারতীয় নাগরিকের গ্রেপ্তার ও জড়িত থাকার ঘটনায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৪৫০টি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪ লাখ কানাডীয় ডলার।
এখনও চলছে ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় থাকা হাজারো ভারতীয় নাগরিকের তালিকা। কানাডা থেকে ফেরত পাঠানোর সর্বোচ্চ সংখ요 এখন ভারতীয় নাগরিকদের, যার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৬,৮৩৭ জন। এরপর রয়েছে মেক্সিকো (৫,১৭০ জন) আর যুক্তরাষ্ট্রের (১,৭৩৪ জন)। মোট ৩০,৭৩৩ জনের ফেরতপ্রক্রিয়া চলছে, যার মধ্যে অধিকাংশই আশ্রয়প্রার্থী, যাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি।
২০১৯ সাল থেকে কানাডায় ভারতীয়দের অভিবাসন সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি, আশ্রয়প্রার্থনা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগেও বাড়ছে ফেরত পাঠানোর ঘটনা। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো অভিবাসননীতিকে কঠোর করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনেও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে, যেখানে বিদেশি অপরাধের বিষয়টি বর্তমানে সরকারের অগ্রাধিকার হয়ে উঠছে।
