দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের দক্ষিণে এক হাজার ৩০০ নতুন বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের সরকার। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে সরকার গঠিত বিশেষ পরিকল্পনা ও নির্মাণ কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। এর মধ্য দিয়ে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২২ সাল থেকে পশ্চিম তীরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৮,০০০ বসতি স্থাপনের অনুমোদন লাভ করেছে।
এই সিদ্ধান্ত দ্রুতই প্রভাব ফেলবে দখলকৃত পশ্চিম তীরের অন্যান্য এলাকাগুলোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর নীতির এক সপ্তাহের মধ্যেই এই ঘোষণা আসে, যেখানে তিনি পশ্চিম তীরের জমি দখল ও বসতি নির্মাণের বিরুদ্ধে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের একদিন আগে, ইসরায়েলি সংসদ নেসেট দখলকৃত পশ্চিম তীর ও মা’লে আদুমিম এলাকার সংযুক্তির জন্য দুটি প্রস্তাবিত আইনের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়।
চ্যানেল ১৪ এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, নতুন এই পরিকল্পনায় আলন শভুত ও হার হারুসিম এলাকার সম্প্রসারণ হবে, যেখানে স্কুল, সরকারি ভবন, পার্ক ও বড় ধরনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই উদ্যোগকে অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা এই এলাকার জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মহল এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং দ্বি রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। জাতিসংঘ বারবার উল্লেখ করে, এই ধরনের বসতি নির্মাণ অবৈধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথকে অবরুদ্ধ করে। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনায় ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমের দাবিকে জোরালো করে তুলে ধরেছে।
এই পরিস্থিতিতে, গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা বেশ বেড়ে গেছে। যুদ্ধবিরতি থাকলেও দখলদার বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় বহু বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে, এবং হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ উঠেছে। হামাস বলছে, তারা এই উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য দায়ী নয়, বরং ইসরায়েলের আক্রমণ ও আগ্রাসনই এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী।
গত মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায় ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুটি শিশু ও নারী। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলা এই হামলায় আরও শত শত গুরুতর আহত হন। ইসরায়েল দাবি করে, তারা এই হামলা চালিয়েছে, কারণ রাফা এলাকায় তাদের সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করে গুলি চালাচ্ছে হামাস। তবে, হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজা অঞ্চলে চলমান এই সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ছুঁইছুঁই করেছে ৬৭ হাজারের বেশি, আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপ চাপা পড়ে আছেন, জীবন এক ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতির আরও এক মারাত্মক ঘটনা হলো, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় স্ত্রীসহ এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের যাওয়ায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নেতৃত্বের অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সত্যের প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ ইসরায়েল এই গণহত্যার তথ্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
এর আগে, আন্তর্জাতিক আদালত নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্তের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গাজায় চলমান এই সংঘর্ষ ও মানবতা নির্যাতনের জন্য তারা আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখোমুখি।
 
				 
															




