গাংনী উপজেলায় সম্প্রতি দিনব্যাপি একটি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী লাঠিয়াল দলের রণকৌশল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে বাংলার গ্রামীণ জীবনধারায় চলমান নানা পরিবর্তনের পাশাপাশি, এই লাঠিয়াল খেলা এখন মানুষের বিনোদনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। এই খেলা কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং সামাজিক সচেতনতা এবং সংস্কৃতি বিকাশের জন্যও এক অনন্য মাধ্যম।
প্রথমে বাদ্যের তালে তালে লাঠিয়ালরা নাচ, আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার নানা কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মনোযোগ কাড়েন। গাংনীতে এই খেলাটি এখন যেন এক প্রাণচঞ্চল লোকজ উৎসবের রূপ নিয়েছে, যেখানে হাজারো নারী, পুরুষ ও শিশু সমবেত হয়ে এই ঐতিহ্যবাহী খেলার আনন্দ উপভোগ করেছেন। এই দিনটি শুধু বিনোদনের নয়, বরং হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ বাংলার শেকড়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
অয়োজকরা বলছেন, এই খেলাটিকে পুনরুত্থান করাই মূল লক্ষ্য, যাতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয় পাশাপাশি মাদক ও জুয়া বিরোধী সমাজ গড়ে তোলা যায়। গাংনী বাজারপাড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, এই ধরণের খেলাধুলা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শরীরচর্চা ও আত্মরক্ষার দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক। তিনি সকলের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেন।
শিশিরপপাড়া লাঠিয়াল দলের টিম লিডার আনিছুর রহমান জানান, এই খেলার মাধ্যমে যুব প্রজন্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো হয়। এ খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো যুব সমাজকে মাদক, জুয়া ও সন্ত্রাসমুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনধারা গড়ে তোলা।
আয়োজক কমিটির সহ-সভাপতি মকবুল হোসেন মেঘলা বলেন, এই ধরণের খেলাধুলার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ এবং আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হয়। তিনি বলেন, বিনোদনের পাশাপাশি এই খেলাটি যুব সমাজকে জুয়া ও মাদক থেকে দূরে রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, যা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই জরুরি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, এই রত্নখণ্ডটি আগে প্রতিরক্ষা ও আত্মরক্ষার উপায় হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এই খেলা বিলুপ্তির মুখে, তবে গাংনীতে এর পুনরুজ্জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উদ্বোধনের সময় সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন সহ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল ও অন্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। দিন শেষে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এভাবে, এই ঐতিহ্যবাহী খেলা নগর ও গ্রামীণ জীবনের এক অপূর্ব স্মৃতি হয়ে থাকবে।





