যশোরের কেশবপুরের আপারভদ্রা নদীর অবৈধ দখল, দূষণ এবং নাব্যতা সংকটের মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মকসুমুল হাকিম চৌধুরী যশোরের কেশবপুরে নদী পরিদর্শন করেন। বৃহস্পতিবার তিনি বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর দখল, দূষণ, খনন এবং নাব্যতা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেশবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ নেওয়াজসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন ধরে ঐ অঞ্চলটির আপারভদ্রা, মুক্তেশ্বরীসহ অন্যান্য নদীতে অবৈধ দখল, নির্মাণবর্জ্য ও নাব্যতা হ্রাসের কারণে পানি নিষ্কাশন ও সেচের কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষలు ৫ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত নদী পরিদর্শনের মাধ্যমে পরিস্থিতির বিস্তারিত মূল্যায়ন করবেন। পাশাপাশি, হরিহর, হরিতেলিগাতি, টেকা ও শ্রী নদীসহ মোট ছয়টি নদীর ৮১.৫ কিলোমিটার অংশে পুনঃখননের কাজের উদ্বোধন হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো ভবদহ অঞ্চলকেএ দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা ও নদীর নাব্যতা সংকট থেকে মুক্তি দেয়া। বিশেষ করে মুক্তেশ্বরী নদীর অনেক অংশ দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে নদীর মোহনাংশ ধীরে ধীরে মাটিতে পরিণত হচ্ছে। নদীর ভরাট, অবৈধ মাছচাষ ও বর্জ্য নির্গমন জলপ্রবাহের স্বাভাবিক গতিতে বাধা দিচ্ছে। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৫ লাখের বেশি মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। ২৪ অক্টোবর, কেশবপুর ও মনিরামপুরে মোট ৬টি নদীর জন্য ১৪০ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও গুরুত্বপূর্ন খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের আশা, এই খনন কার্যক্রম ভবদহ অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূর করবে। যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, “গত কয়েক বছর কাজের গতি খুব ধীর ছিল; এখন তা দ্রুততর করা হবে।” পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ভার্চুয়াল মাধ্যমে বলেন, “নদীর নাব্যতা, দখল ও দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। একসঙ্গে নদীর সীমানা পুনঃনির্ধারণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, দখলকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, বর্জ্য নিষ্কাশনের উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত নিকাশী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও, নদীর আয়তন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নদীর পরিবেশ ও ভূমিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য, সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা—কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন—মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং ও সমন্বয় অপরিহার্য।” এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে নদী ও জলাধার সংরক্ষণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।





