মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ৩৬ দিনের সরকারি অচলাবস্থার কারণে আকাশপথে তীব্র প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশটির বিমান চলাচলে নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার থেকেই দেশটির ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে ফ্লাইটের সংখ্যা ১০ শতাংশ দ্বারা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে কর্মী সংকটের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসনামলে ৩৫ দিনের জন্য সরকারি কার্যক্রম বন্ধ ছিল, যা মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল। এবার তার চেয়েও এক দিন বেশি, অর্থাৎ ৩৬ দিন ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রায় ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তার বেতন না পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, যার ফলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের হার।
শুক্রবার থেকে ৪০টি বড় বিমানবন্দরে ফ্লাইট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি। তিনি জানিয়েছেন, দেশের বড় কয়েকটি বিমানবন্দরে সরাসরি ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানো হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ। ডাফি বলেন, “যদি শ্রমিকরা সরকারের অবস্থা সচল করতে রাজি হন, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন হতে পারে।”
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই অচলাবস্থা টানা ৩৬ দিন ধরে চলেছে, যা মার্কিন ইতিহাসে রেকর্ড। এর আগে, ২০১৮-২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ৩৪ দিন টানা সরকারি বন্ধ থাকেছিল। এর ফলে ফ্লাইটের সময়সূচি পরিবর্তনের কাজ দ্রুত শুরু হয়েছে এবং যাত্রীরা টিকিট বাতিল ও পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
এফএএ জানিয়েছে, ফ্লাইট সংখ্যা ধাপে ধাপে কমানো হবে: প্রথমে ৪ শতাংশ, শনিবার ৫ শতাংশ, রোববার ৬ শতাংশ এবং আগামী সপ্তাহে এটি ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই কাটছাঁটের বাইরে থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ডালাসসহ দেশের বড় ও ব্যস্ত ৩০টি বিমানবন্দরে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এর ফলে প্রায় ১৮০০ ফ্লাইট ও ২ লাখ ৬৮ হাজার আসন কমে যাবে বলে আশা করছে বিমান বিশ্লেষক সংস্থা সিরিয়াম।
প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবসতার কারণে লক্ষাধিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে, একইসঙ্গে ৩২ লাখের বেশি যাত্রীকে অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে। স্থানীয় সময় পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি বলেন, “আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো নিরাপদ আকাশসীমা নিশ্চিত করা। কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়াই এখন একমাত্র বিকল্প।”
এফএএ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ঘাটতি রয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে। শাটডাউন আগে থেকেই এই সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী স্কট কারবি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ও হাব-টু-হাব রুটের ফ্লাইট স্বাভাবিক থাকবে, তবে দেশীয় ও আঞ্চলিক রুটে কিছু কাটছাঁট করতে হয়ত হবে। যাত্রীরা চাইলে ফ্লাইট বাতিল না করে বা ভ্রমণ না করতে চাইলে তাদের অর্থ ফেরত পাবেন।
আমেরিকান এয়ারলাইনসও বলেছে, যাত্রীদের ওপর প্রভাব খুবই সীমিত থাকবে। অন্যদিকে, সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দেশীয় বিমান সংস্থা, জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করছে এবং দ্রুত যাত্রীদের তথ্য জানানো হবে।
শাটডাউন পরিস্থিতিকে ‘আমেরিকানদের জন্য নিষ্ঠুর আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ইউনিয়নের সভাপতি সারা নেলসন। তিনি বলেন, “ফেডারেল কর্মীদের বেতন বা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারের। এই সংকটের সমাধান প্রত্যেকের দায়িত্ব।”
শুক্রবারের এই অচলাবসার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বাড়ানো না হলে তারা যেন কোনো বিল অনুমোদন না করেন। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা এতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি জনজীবনে এই অচলাবস্থা আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।





