সোমবার, ১০ই নভেম্বর, ২০২৫, ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির হুঁশিয়ারি ও সুপারিশ

সম্প্রতি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষকে দিশেহারা করে তুলেছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাজারে অস্থিরতা চলছে, যেখানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়ে, ফলে দাম ১১০ টাকার বেশি হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীরা কারসাজি করে মূল্য বাড়াচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে, তবে সরকার তার দৃষ্টিতে রেখেছে এই বিষয়টি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সতর্ক করে দিয়েছেন, অতিরিক্ত দাম কমাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবস্থা নিতে বলবেন। তিনি আরও জানান, সরকার বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের স্বাভাবিক সরবরাহের ব্যাপারে আশাবাদী, কারণ দেশীয় উৎপাদন অত্যন্ত ভালো চলছে। তবে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) পেঁয়াজের উচ্চমূল্য কমাতে বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১১০ টাকার বেশি, তাই প্রয়োজন হলে আমদানি বৃদ্ধি করে সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত। তবে তারা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন, বাজারে অস্বাভাবিক দামের পেছনে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি দায়ী। তারা আরও জানান, বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা, উৎপাদন, আন্তর্জাতিক মূল্য ও আমদানির শুল্ক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

কৃষি অধিদপ্তর বলছে, দেশের বাজারে কোন ঘাটতি নেই। চলতি মাসে অন্তত ৭৫ হাজার টনের বেশি দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসছে। তবে কিছু আমদানিকারক অনুমতি না পাওয়ায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে। তারা বলছেন, এখনই আমদানি করতে গেলে যখন বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসছে, তখন কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে না। তাদের মতে, বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত আছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতার জন্য তদারকি চলছে।

গতকাল রোববার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের পেঁয়াজের ফলন আশানুরূপ হয়েছে, কোন সংকট নেই। সরকার পর্যাপ্ত সংরক্ষণের জন্য হাই ফ্লো মেশিনও সরবরাহ করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে, তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।

আরো তিনি জানান, বর্তমানে পেঁয়াজের জন্য একটি বড় চাহিদা রয়েছে, যার কারণে দুই হাজার ৮০০টির বেশি আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ অনুমোদন দিলে বাজারে সয়লাব হয়ে যাবে, ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই পুরো পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মজুতদারি বা সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের খবর আমার কাছে নেই, তবে সাময়িক সংকট মাত্র। আশাবাদী, দ্রুত এই সংকট কাটিয়ে উঠা যাবে। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে পেঁয়াজের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে।

বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পেঁয়াজের উপর মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিচ্ছে। আমদানি করলে বাজারের প্রভাব কমে যাবে এবং ভোক্তারা বেশি দামে না কিনে যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবে। গবেষণায় দেখা গেছে, গত মার্চে দেশের বাজারে পেঁয়াজের গড়মূল্য ছিল ৩৩ টাকা কেজিতে, যা নভেম্বর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা। ২০২৪ সালের এপ্রিলের গড় মূল্য ছিল ৬৩ টাকা, যা নভেম্বরে গিয়ে ১৩০ টাকা। মার্চ-এপ্রিলের তুলনায় নভেম্বরের দাম প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে।

অর্থাৎ অতীতের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন; সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মৌসুমের বিলম্বিত রোপণ ও উৎপাদনের কারণে এই মূল্যবৃদ্ধির স্থায়ী সমাধান এখনও আসেনি। সেই সঙ্গে, গত দুই-তিন মাসে মূল্যের স্থিতিশীলতা থাকলেও শেষ সপ্তাহে দাম আরও বাড়তে শুরু করেছে। বাজারের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বোঝায়, এটি সম্ভবত বাজারের দুর্বলতা ও সিন্ডিকেটের কারসাজির ফল।

বিজনেস প্রতিনিধিরা বলছেন, অক্টোবর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও, এ বছর আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে, তারা আশা করছে, পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়লে দাম কমবে, এবং কেজিপ্রতি ৫০ টাকার নিচে বিক্রি সম্ভব হবে। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ।

প্রধানত ভারত থেকে বাংলাদেশের পেঁয়াজের আমদানি হয়, এর পাশাপাশি তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আনা হয়ে থাকে। গত অর্থবছরে দেশে চার লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা এখনো দেশীয় বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পোস্টটি শেয়ার করুন