সোমবার, ১০ই নভেম্বর, ২০২৫, ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২

যুদ্ধবিরতির পরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৬৯ হাজার

এক মাস ধরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও মৃতদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে নিহতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি আক্রমণে বর্তমানে মৃতের সংখ্যা ৬৯ হাজারের বেশি পৌঁছে গেছে। অন্যদিকে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের ওপর হামলার তীব্রতাও বেড়েই চলেছে। এই তথ্য সম্প্রতি সংবাধমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সামরিক সংঘর্ষের পর থেকে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬৯,১৬৯ এ দাঁড়িয়েছে। নতুন করে উদ্ধার ও শনাক্ত হওয়া লাশের কারণে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মন্ত্রণালয় আরো জানায়, যুদ্ধবিরতির এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও গত মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে।

এদিকে শনিবারও নতুন করে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, উত্তর গাজায় তাদের অবস্থানে থাকা সেনাদের দিকে অগ্রসর হওয়া এক ফিলিস্তিনি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি ‘ইয়েলো লাইন’ নামে পরিচিত সীমান্ত পেরিয়ে আসছিল।

‘ইয়েলো লাইন’ হলো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষুদ্র পিছু হটার নির্ধারিত সীমা। ইসরায়েলি সেনারা জানায়, দক্ষিণ গাজায়ও একইভাবে সীমারেখা অতিক্রম করে আসা একজন ফিলিস্তিনিকে তারা গুলিতে হত্যা করেছে, কারণ তিনি সৈন্যদের জন্য ‘অতিৎরণ হুমকি’ তৈরি করেছিলেন।

অন্যদিকে, ওই সীমান্তের কাছাকাছি থাকা পরিবারগুলোও লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া খান ইউনিসে ইসরায়েলি সেনাদের ফেলে যাওয়া বিস্ফোরকের কারণে এক ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আবারও গাজা ও মিসরের মধ্যে রাফাহ সীমান্তের দ্রুত খোলা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ফিলিস্তিনি রোগী রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিসর বা অন্য দেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। তবে আরও ১৬ হাজার ৫০০ জন অপেক্ষায় রয়েছেন।

অন্যদিকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা অভিযান ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলা আরও জোরদার হয়েছে। এসব হামলা মূলত ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ জমি থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনার অংশ বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার দক্ষিণ নাবলুসের বেইতা শহরে জলপাই সংগ্রহে ব্যস্ত গ্রামবাসী, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা।

ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী জোনাথন পোলাক আল-জাজিরাকে বলেন, মুখোশধারী ডজনখানেক বসতি স্থাপনকারী লাঠি ও বড় পাথর নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপি দিয়েছে। তারা পাহাড় থেকে নেমে আক্রমণ করে বিশাল পাথর ছুড়তে শুরু করলে আমাদের পালাতে হয়।

এই হামলায় অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও একজন ৭০ বছর বয়সী কর্মী রয়েছেন।

প্যালেস্টাইন জার্নালিস্টস সিন্ডিকেট বলেছে, এই ঘটনার সময় তাদের পাঁচ সাংবাদিক — রানিন সাওয়াফতে, মোহাম্মদ আল-আত্রাশ, লুয়াই সাঈদ, নাসের ইশতাইয়েহ ও নাঈল বুয়াইতেল — আহত হয়েছেন। তারা এই ঘটনাকে ‘সাংবাদিক হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের’ ঘটনা বলেছে।

রয়টার্সও নিশ্চিত করেছে, তাদের দুই কর্মী — একজন সাংবাদিক ও তার নিরাপত্তা পরামর্শক — হামলার শিকার হয়েছেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০টি শহর ও গ্রামে ১২৬টি হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় ৪ হাজারের বেশি জলপাইগাছ ধ্বংস বা উপড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন