সোমবার, ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বিশ্বাস, সম্পর্ক ও আনন্দে ব্যাংকিং: রকিবুল হাসানের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

অর্থনীতির সাধারণ হিসাব-নিকাশের মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয় সংখ্যা ও গাণিতিক বিশ্লেষণ। তবে এনআরবিসি ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক রকিবুল হাসান সবুজ এই ধারণাকে অনেকটাই বদলে দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যাংকিং শুধুমাত্র টাকা লেনদেনের বিষয় নয়; এটি বিশ্বাস, সম্পর্ক ও আনন্দের বিনিময়ের এক অনন্য মাধ্যম।

তিনি গড়ে তুলেছেন এক নতুন ধারা—‘আনন্দময় ব্যাংকিং’, যেখানে কর্মী ও গ্রাহক উভয়ের হৃদয়ে স্বাচ্ছন্দ্য ও বিশ্বাসের গভীরতা জাগে। ২০২২ সালে এনআরবিসি ব্যাংক তাকে ‘সেরা পারফরমার’ হিসেবে সম্মানিত করে, যা তার ব্যক্তিগত কৃতিত্বের বাইরে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সৃজনশীলতার জন্য এক গর্বের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্যাংকিং খাতের এই বিশেষজ্ঞ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ব্যাংকিংকে সহজ, মানবিক এবং হৃদয়স্পর্শী করে তুলতে গিয়ে তিনি অনেক কর্মে এগিয়ে এসেছেন। কিছু কাজের মাধ্যমে তিনি দেখাতে পেরেছেন যে, ব্যাংক কেবল চারকোণা টেবিলের সীমানায় বন্দী নয় বরং এটি সমাজের সঙ্গে গভীর সংযোগ স্থাপন করে।

প্রশ্নে, তাঁর মূল দর্শন কী—ব্যাংকিংকে কি তিনি শুধু সংখ্যার খেলা হিসেবে দেখেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমি কখনোই ভাবিনি, ব্যাংকিং শুধু হিসাবের খেলা। প্রতিটা লেনদেনের পেছনে লুকিয়ে আছে একজন মানুষের স্বপ্ন, পরিশ্রম ও বিশ্বাস। তাই আমার জন্য ব্যাংক মানে এই মানুষগুলোর বিশ্বাসের কেন্দ্র। আমি চেয়েছি, গ্রাহক যখন ব্যাংকে আসবেন, তখন যেন মনে করেন, তারা কোনও প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বিশ্বাসের একটি জায়গায় এসেছেন। আমাদের লক্ষ্য হলো এই ব্যাংকিং যেন উপভোগ্য এবং হৃদয়স্পর্শী হয়। এই ভাবনাগুলোর উপর ভিত্তি করেই আমি শুরু করেছি ‘আনন্দময় ব্যাংকিং’ এর পথ।

তিনি আরও বলেন, তাঁর সবচেয়ে বড় চেষ্টাই ছিল ব্যাংককে সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করে তোলা। যেমন করিমগঞ্জের প্রান্তিক বাঁশ-বেত কারিগরদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রথম বর্ষ বসন্তে তাঁদের জন্য ঋণ প্রদান করা, একধরনের সম্মান ও ঐতিহ্যকে সমর্থন।

বিজয় দিবসের ঘটনাও ছিল এক উৎসব—অর্থনৈতিক স্বাধীকারের প্রতীক ‘টাকার ইতিহাস’ শীর্ষক একটা আয়োজন, যেখানে শিক্ষার্থীরা শিখেছে যে, আর্থিক সক্ষমতা স্বাধীকারের অপরিহার্য অংশ। তেমনি, ঈদ ও দুর্গাপূজায় আমরা গ্রাহকদের জন্য নানা আনুষ্ঠানিকতা করেছি, যেমন ঈদের সময় ক্ষুদ্র পথশিশু ও বৃদ্ধদের নতুন টাকা উপহার দেয়া বা জনপ্রিয় পদ্ম ফুল উপহার, যা সমাজে সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা প্রবাহিত করে। এই সব কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো, ‘লেনদেন নয়, সম্পর্ক গড়া’।

ব্যাংকের এই উদ্যোগের শুরুতে কিছু বাধা ছিল সম্ভবত। তবে সহকর্মীরা যখন দেখলেন, গ্রাহকদের হাসি, উচ্ছ্বাস এবং সমাজের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া—তখন সবাই এটি গ্রহণ করলেন উৎসবের মতো। আজ এই উদ্যোগগুলো ব্যাংকের প্রশংসাও কুড়াচ্ছে। তিনি মনে করেন, উদ্দেশ্য যদি ভাল হয়, তবে প্রতিটি উদ্যোগ নিজস্ব পথ খুঁজে নেয়।

আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রকিবুল হাসান সবুজ মনে করেন, বর্তমানে মানুষ যখন প্রতিষ্ঠান ও সম্পর্কের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে, তখন ব্যাংকগুলো যদি আর विश्वासের প্রতীক হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়তে পারে—তাহলে সমাজে ভারসাম্য ও শান্তি ফিরে আসবে। তিনি বিশ্বাস করেন, পারস্পরিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে, মানুষ আবার বলবে, ‘ব্যাংক মানে নিরাপত্তা, ব্যাংকার মানে বিশ্বাস।’ এই আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের অর্থনৈতিক স্বপ্ন ও অস্তিত্ব আছে। ডিম বিক্রেতা, চা বিক্রেতা, রিকশাচালক—তাদের অ্যাকাউন্ট খোলানো যেন তাদের সম্মান ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। প্রথম এক ডিমওয়ালা নিজ নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে যে উজ্জ্বলতা দেখেছে, তা দেখিয়ে দেয় যে, ব্যাংক কেবল টাকা রাখার জায়গা নয়, এটি বিশ্বাস ও আত্মসম্মানের স্থান।

আর ‘সেরা পারফরমার’ হিসেবে পুরস্কার পাওয়াটা তাঁর জন্য গর্বের বিষয়। তবে তিনি এএ বলে মনে করেন, এটি পুরো টিমের সম্মিলিত অর্জন। সহকর্মীদের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও উপভোগের মানসিকতা এই স্বীকৃতির অন্যতম কারণ। তিনি বলছেন, ব্যাংকিংয়ে সৃজনশীলতা ও আনন্দ ফিরিয়ে আনার এই প্রয়াসের জন্য এটি একটি সুন্দর স্বীকৃতি।

পোস্টটি শেয়ার করুন