বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ীরা জানান, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর আওতায় বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা আগামী দশকে আরও প্রতিষ্ঠিত এবং বিকশিত হবে। এই সহযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো শিল্পের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, উৎপাদন প্রতিযোগিতা বাড়ানো এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারকে চীনে আরও বিস্তৃত করা।
চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি)-এর সভাপতি হান কুন বলেন, বিআরআইর পরবর্তী ধাপটিতে টেকসই কার্যক্রম, যৌথ অর্থায়ন ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি স্পষ্ট করেন, বিআরআই একক কোনো দেশের উদ্যোগ নয়, বরং এটি একটি যৌথ বিনিয়োগ কাঠামো যেখানে উভয় দেশের সরকার, ব্যবসায়ীরা এবং বিনিয়োগকারীরা অংশ গ্রহণ করে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে হান জানান, অনেক মানুষ এখনও ভুল ধারণা পোষণ করেন যে, সব বড়ো প্রকল্প চীন এককভাবে অর্থায়ন করে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এটি সত্য নয়; বিআরআই একটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রকল্প, যেখানে সুবিধা ভাগাভাগি ও যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো কার্যকর করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৪০টিরও বেশি দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে, ফলে একক কোনো দেশের পক্ষে সব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি মজবুত করেন, চীনের অর্থনীতি এখনও বলিষ্ঠ থাকলেও সব প্রকল্পে অর্থায়ন সম্ভব নয়, তাই বিনিয়োগ ভাগাভাগি, সুবিধা ভাগাভাগি ও প্রকল্পের রূপান্তর সম্ভব হলে টেকসই উন্নতি হবে।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরআই-তে যোগ দেয়। তার পর থেকে বিভিন্ন বড় প্রকল্প যেমন সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টানেল ও সড়ক অবকাঠামো চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে রেয়াতমূলক ঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ।
হান কুন জানান, সহযোগিতা শুধু নির্মাণ ও চুক্তিভিত্তিক কাজ নয়, এটি শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধি করবে। চীনের সাংস্কৃতিক শিল্প যেমন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ ও মিডিয়া বিনিময় ইতিমধ্যে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক গভীর করে তুলছে।
অপর দিকে, তিনি উল্লেখ করেন, চীনের নতুন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যদি পরিবেশ স্থিতিশীল থাকে এবং উভয় পক্ষ সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা চালিয়ে যায়, তবে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। সিইএবির মাধ্যমে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সংযোগ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং বিভিন্ন দিক থেকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
প্রত্যাশা করা যায়, আগামী দশকে শিল্পের বৈচিত্র্য, উৎপাদন প্রতিযোগিতা ও চীনেয় বাংলাদেশের রপ্তানি সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব বাড়বে। এরই মধ্যে, বাংলাদেশের রপ্তানির তালিকা নতুন করে বিস্তার লাভ করছে, যেমন চীনের বাজারে বাংলাদেশি আমের প্রবেশের অনুমোদন পাওয়া। সামনের দিকে কাঁঠালসহ আরও কিছু পণ্য অনুমোদনের প্রত্যাশা রয়েছে। ফলে, আমাদের আরও রপ্তানিযোগ্য পণ্য চিহ্নিত ও উন্নত করতে হবে।
অবকাঠামো উন্নয়নে যেমন এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও পানিসম্পদ ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের কাজ ধীরে ধীরে চালানো হবে।
বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, হান কুন আশা ব্যক্ত করেন যে, বিআরআই এই প্ল্যাটফর্মটি ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ফলাফল দিচ্ছে এবং উভয় দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে আরও বিকশিত হবে। তিনি বলছেন, এই সহযোগিতা আরও বিস্তারশীল হয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করবে।
তিনি সুপারিশ করেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিআরআইয়ের ভবিষ্যৎকে কৌশলগত দৃষ্টিতে দেখা উচিত, যেখানে এটি কেবল চীনের অর্থায়ন নয়, বরং একটি টেকসই ও যৌথ উন্নয়নের কাঠামো হিসেবে বিবেচিত হবে।
সরকারি পর্যায়ের (জি-টু-জি) প্রকল্পের অনুমোদনে দীর্ঘ সময় নেওয়ার বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই জটিল প্রক্রিয়াকে সরল ও দ্রুত করার কোনও উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যেন বিভিন্ন স্তরে অনুমোদনের জন্য সময় কম লাগে এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত সম্ভব হয়।





