সোমবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৫, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার বৈঠক

বাংলাদেশ সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্য বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে। এই বৈঠকটি শনিবার ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশ সম্পর্কে বললেন, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই মজবুত। তিনি আরও যোগ করেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানো আমাদের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে। ভুটান একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, যা ভুটানের জন্য অগ্রাধিকার। তিনি প্রকাশ করেন, ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে আন্তরিক।

শেরিং তোবগে কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য নির্ধারিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতিমধ্যে নানা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া, তিনি বলেন, ভুটান সরকার বায়োডাইভারসিটি নগর গেলেফু তৈরি করছে, যা ভুটানের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ। এই নগরটি প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত এবং টেকসই অবকাঠামো দিয়ে নির্মিত হবে। এজন্য বড় পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রী প্রয়োজন, যা তিনি বাংলাদেশ থেকে আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এছাড়াও, ভুটানের প্রতিনিধি বাংলাদেশের ওষুধ, সিরামিক পণ্য, তৈরি পোশাক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে ভুটানের পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ভুটানে পর্যটকদের জন্য যেখানে অন্যান্য দেশের জন্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি (এসডিএফ) ১শ ডলার নির্ধারিত, সেখানে বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য মাত্র ১৫ ডলার। তিনি সরকারের প্রতি উৎসাহিত করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভুটানে পর্যটন উদ্যোগগুলো আরও বাড়াতে হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতি ভুটানের দেওয়ার কথা স্মরণ করেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করে। তিনি বলেন, বাণিজ্যের উন্নতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে।

তিনি উল্লেখ করেন, আসন্ন বাংলাদেশ-ভুটান সচিব পর্যায়ের বৈঠকে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, দুদেশের ব্যবসায়ীরা একে অন্যের সঙ্গে আরও বেশি সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করলে দু’দেশের বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে।

বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বমানের ওষুধ, সিরামিক পণ্য, তৈরি পোশাক ও নির্মাণ উপকরণ তৈরি হচ্ছে, যা অন্য দেশের বাজারেও বিশেষ স্থান পেয়েছে। এই পণ্যগুলো ভুটানে আমদানি করলে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভুটানের ফরেন অ্যাফেয়ার্স ও এক্সটার্নাল ট্রেড মিনিস্টার ডি এন ধুনগায়েল, ইন্ডাস্ট্রি, কমার্স অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্টার লায়েন পো নামগায়েল দর্জি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান।

ইতিমধ্যে, শনিবার সকালে শেরিং তোবগে ঢাকার উদ্দেশ্যে ওয়ারিত হন। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বহনকারী ড্রুক এয়ার ঢাকায় অবতরণ করে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুভাচ্ছা জানানো হয়। এই সফরের অংশ হিসেবে, বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল ভুটানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ চালানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন