চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আর সেই সময়ে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন আমন ধান কাটার জন্য। প্রত্যেক বছর এই সময়ে সারাদেশের মতোই জয়পুরহাটের বিভিন্ন কৃষি এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ব্যাপক ধুম দেখা যায়। এবারও তার বিরক্তি হয়নি। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠগুলো এখন সোনালী রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে, আর কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সুবিধায় অনেক কৃষক মাঠে সরাসরি ধান মাড়াই করতে পারেন, আবার কেউ কেউ বাড়ির উঠানে ধান কেটে মাড়াই করছেন। তবে, এই বছর আবহাওয়ার অনুকূল ব্যত্যয় এবং অসময়ের বর্ষণে ফলন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায়, বিশেষ করে কালাই উপজেলারSome আবাদি জমিতে বিশেষ করে অগ্রগামী ধানের ফলন ভালো হয়েছে, তবে গড় ফলন গত বছরের তুলনায় কম। প্রতি বিঘা জমিতে এখন ফলন হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ মন, যা গত বছর কিঞ্চিৎ বেশি ছিল। বাজারে ধানের দামেও দুর্বলতা থাকায় অনেক কৃষক ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবছর আমন ধান চাষের জন্য মোট ৭০ হাজার ৯৫ হেক্টর জমি বরাদ্দ ছিল, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ও অসময় বৃষ্টির ফলে ১১৩ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে চাষের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৯৮২ হেক্টর। উৎপাদনশীলতার হিসাব করলে, বিঘা প্রতি ফলন কমে গেছে, এখন ১৬ থেকে ১৮ মন ধান হয়, যা গত বছরের তুলনায় ৪-৬ মন কম। সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলার মাঠগুলোতে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ, বাতাসে দুলছে স্বপ্নের ধান, আর চারপাশে ভোরের নরম গন্ধ। ধান কাটার ও মাড়াইয়ের ধুম চলছে। উৎসবের মতো এই ধান কাটা-মাড়াই মৌসুমে কৃষকরা তাদের মানিক ধান ঘরে তোলার জন্য ব্যস্ত। কিছু কৃষক বাড়ির উঠানে ধান কেটে মাড়াই করছেন, আবার কেউ মাঠে। সদর উপজেলার সোটাহার ধারকী গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, এই বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন, কিন্তু ফলন গত বছর অপেক্ষা কম হয়েছে ৪-৬ মন প্রতি বিঘায়। বাজারে ধানের দামে মনোমালিন্য থাকায়, প্রতি বিঘা ধান বিক্রি করে প্রায় ৫ হাজার টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন। কালাই উপজেলার পাঁচগ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ধান বাড়িতে তুলতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা প্রতি বিঘা, কিন্তু ধান বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায়, ফলে লাভের বদলে ক্ষতি হচ্ছে। বজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে মোটা আমন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণে ১২০০ টাকা, আর চিকন ধানের দাম সর্বোচ্চ ১৩০০ টাকা। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবছর জেলায় ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আশা করা হচ্ছে। তবে, কম দামের কারণে কৃষকরা ধান বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার উপদেশ দিয়েছেন তিনি।





