সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

চার মাস ধরে রপ্তানি আয়ে পতন, নভেম্বরের তুলনামূলক কমতি ৫.৫৪ শতাংশ

নভেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৫৪ শতাংশ কম। আজ বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে চলতি বছর চার মাস ধরে রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিক পতন শুরু হয়েছে।

জুলাইয়ে রপ্তানি Sector আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক সাফল্য দিয়েছিল, যেখানে আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৭৭.৫ میلیون ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২৪.৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর থেকেই সেই উচ্ছ্বাসের পালাই বদলে যায়। আগস্টে ক্ষুদ্র কিছু উন্নতি থাকলেও প্রবৃদ্ধি কমে আসে ২.৯৩ শতাংশে। সেপ্টেম্বরের মহামন্দায় গত বছরের সঙ্গে তুলনায় পতন হয় ৪.৬১ শতাংশ এবং অক্টোবরের হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭.৪৩ শতাংশে।

অর্থাৎ, জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচক বিবেচনায় মোট রপ্তানি আয় পাঁচ মাসে সামান্যই বেড়েছে। প্রথম দিকে জোয়ারের মতো শুরু হলেও এখন দেখা যাচ্ছে, এটি ধীরে ধীরে নিম্নমুখী। এই সময়ের মধ্যে, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয়ের মোট পরিমাণ ছিল ২০০২.৮৫ মিলিয়ন ডলার, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কেবল ০.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, সামষ্টিক দিক থেকে এই পাঁচ মাসের রপ্তানি চিত্র মোটের উপর খুবই উদ্বেগজনক।

বিশেষ করে পোশাক খাতে নভেম্বর মাসে বড় ধাক্কা লেগেছে, যা দেশের রপ্তানির মূল ভিত্তি। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪.৯০ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। নিটওয়্যার খাতে আয় ১৬১.৮৪ মিলিয়ন ডলার এবং ওভারন ১৫২.২৪ মিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিটওয়্যার ওভারন ছিল যথাক্রমে ১৭৩.৮২ মিলিয়ন ও ১৫৬.৯২ মিলিয়ন ডলার।

অন্য খাতে রপ্তানি কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে, যেমন কৃষিপণ্য ২৪.৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ১৫.৪৯ শতাংশ। পাশাপাশি চামড়া, পাট, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ নির্মাণ, চিংড়ি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতেও দেখা গেছে মন্দা। এর মানে হলো, বেশ কিছু মূল খাতে মন্থরতা স্পষ্ট করেই বোঝা যাচ্ছে।

তবে সব বাজারে একই চিত্র দেখা যায়নি। কিছু গন্তব্যে অপ্রত্যাশিত ধরণের উন্নতি দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪.২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩.০৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যে চীনে রপ্তানি বাড়ছে ২৩.৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১.৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১.৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০.৪৬ শতাংশ। এই ধরণের প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বেশ কিছুটা ব্যতিক্রমী সাফল্য হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

সার্বিকভাবে বলতে গেলে, চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে, ঐতিহ্যগত বড় খাতে পতন দেখা দিলো; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে কিছুটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখনই, এই ধারাবাহিক বাজার বৃদ্ধির জন্য কি পোশাকসহ প্রধান খাতগুলো মন্দার ধারা থামিয়ে দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। উৎপাদন ও বিক্রির প্রতিযোগিতা বাড়ানো, মূল্যের চাপের সাথে মোকাবিলা, বিশ্ববাজারের অস্থিরতা এবং অর্ডারের সংকটকে মোকাবেলা করে রপ্তানি খাতে ভবিষ্যৎ পথে এগিয়ে যেতে হবে। এবিষয়ে পদ্ধতিগত উন্নয়ন ও মনোযোগ দিয়ে দেশের রপ্তানি খাতকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন