গত শনিবার চট্টগ্রামে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ পাশাপাশি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের জন্য বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আলোচনায় উঠে আসে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান ব্যবসায়িক বিরোধ ও জটিলতা সমাধানে সহায়ক হবে এমন বিশেষায়িত আদালত প্রতিষ্ঠা। আইনে বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও অর্থনীতিবিদ অংশগ্রহণ করেন। বার্ষিক এই সভায় বিচার বিভাগ কি ধরনের কার্যকরী স্ট্রাকচার তৈরিতে এগিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ইউএনডিপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এসব আদালত দেশের আর্থিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করা মামলা ঝামেলা কমিয়ে আনবে, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে এবং দেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, এই আদালত প্রতিষ্ঠা দেশের বিচার ব্যবস্থা ও অর্থনীতির মধ্যে বিশ্বাস বাড়াবে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরীতে বিচার ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণে সহায়ক হবে। তিনি আইজীবী সমাজ, বিচারক ও অংশীদারদের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে এই আদালত গুরুত্বপূর্ণ সামর্থ্য যোগ করবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার জানান, স্বচ্ছ ও সময়োচিত বিরোধ নিষ্পত্তি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে অপরিহার্য। সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, এই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে রূপান্তর করবে। ইউএনডিপির বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার উল্লেখ করেন, বাণিজ্যিক আদালত বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য আরও নিরাপদ ও বিশ্বস্ত করে তোলার পথে সামনে এনে দিবে। অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পব্ক বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংস্কার দিকে অগ্রসর হওয়া বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়, যা বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক। বিশেষজ্ঞদের প্যানেলে ছিলেন ব্যারিস্টার মারগুব কবির, ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার, ইউএনডিপির উপসচিব ওয়াইস প্যারে, ও ডেস্ক স্পেশালিস্ট ক্রিস ডেকার। আলোচনা হয় দীর্ঘমেয়াদি মামলার জট, আইনি কাঠামো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য প্রবেশাধিকার ও অবকাঠামোগত চাহিদা নিয়ে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপির সিনিয়র অ্যাডভাইজর রোমানা শভাইগার। সেমিনার শেষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বিচার বিভাগের দৃষ্টিতে বাণিজ্যিক আদালত চালু করা জরুরি। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হবে এবং বিচার ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়-আস্থা ও দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় হবে বলে প্রত্যাশা।





