ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী কোন দলই থাকুক না কেন, সরকার ও দেশের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের পাশে থাকবো বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীপরিষদের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি জানান, আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে সরকার প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বরিশালের বাবুগঞ্জে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর নতুন নির্মিত বাবুগঞ্জ–মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রতিউত্তরে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণভাবে, উৎসবমুখর পরিবেশে হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগের মতো ভোট কেন্দ্র দখল বা সহিংসতার পুনরাবৃত্তির কোনো প্রয়োজন নেই; নির্বাচন সম্পন্নের দায়িত্ব এখন নির্বাচন কমিশনের। আমরা শুধু স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে চেষ্টা করছি। অন্যদিকে, সেতু প্রকল্পের কাজ কিছু জটিলতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে বিলম্বিত হয়েছে, যার ফলে ব্যয়ও বাড়ছে। তিনি কমিশনের সাথে কাজ করে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বরিশাল অঞ্চলের তিনটি উপজেলা দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ঝেড়ে ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফাওজুল কবির। তিনি জানান, প্রকল্পটি দ্রুত শুরু করতে সরকার সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজকের দিনটি এই এলাকার মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সেতু তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি সহযোগিতার জন্য সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব মাহবুবুর রহমান এবং নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এক্সক্লুসিভ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ভোলার গ্যাসের ব্যবহার স্থানীয়ভাবে করানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে ফার্টিলাইজার কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। তবে নতুন আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই, কারণ ভোলার সঙ্গে জাতীয় গ্রিডে সরাসরি গ্যাস সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি। অন্যদিকে, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন মন্তব্য করেন, আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর নির্মিত সেতুটি বরিশালের তিন উপজেলার জীবনমানের পরিবর্তন সাধন করবে। তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়েছেন যাতে সেতুর নির্মাণ মানসম্মতভাবে সম্পন্ন হয় এবং অর্থাৎ কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। বরিশাল নদী বন্দরের উন্নয়নের বিষয়েও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, জানিয়ে দেন ইতোমধ্যে পোর্ট রোডের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে এবং নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। নদী সঙ্কট ও বন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমনসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী, ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে সম্ভাব্য ৫.৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও নদী শাসন কাজ সম্পন্ন করে সেতুটিকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এই সেতুটি প্রায় এক হাজার ৪৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য সম্পন্ন হবে, যা দৃশ্যত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতু ও বরিশালের পায়রা সেতুর মতোই আধুনিক নির্মাণে পরিণত হবে। মূল সেতুটির দুটি এবাটমেন্ট, ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি ও ৯৭ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি পিয়ার থাকছে মোট ৫৪৪ মিটার। এর পাশাপাশি, দুপ্রান্তে সংযুক্ত থাকবে মোট ৯৪০ মিটার ভায়াডাক্ট। মোট পিয়ারের সংখ্যা হবে ৩০টি। সেতুর দুই প্রান্তে প্রায় ৫.৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে, যেখানে টোলপ্লাজার পাশে রিজিট পেভমেন্ট ও বাকি অংশে ফ্লেক্সিবেল পেভমেন্ট তৈরি হবে। সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে সেতু রক্ষায় আড়িয়াল খাঁ নদীর ৪৬০ মিটার নদীতীর রক্ষা কাজে ৯৬.৬১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, এছাড়া সংযোগ সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৯৩.৫৮ কোটি টাকা।





