শনিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ আমদানি: গ্রাহক পর্যায়ে সুবিধা মিলবে?

ভারতের পর নেপাল থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। নেপাল থেকে যে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে তা প্রতি ইউনিটের দাম ৬ দশমিক ৪ সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৭ টাকা। কিন্তু জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ শূন্য হওয়ায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকার মধ্যে। কিন্তু সেই বিদ্যুৎই নেপাল থেকে সাড়ে ৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ আমদানিতে বুঝে-শুনে এগোনো উচিত।

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রতিক্রিয়ায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা। তাদের মতে, ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের পর নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। উপমহাদেশে বাংলাদেশই প্রথম কোনও দেশ— যারা একসঙ্গে ভারত এবং নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এই নীতি অনুসরণ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরস্পর সহযোগী হলে এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে রাষ্টগুলোর পরস্পর সহযোগী মনোভাব প্রয়োজন।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) নেপাল থেকে ভারতীয় গ্রিড লাইন দিয়ে বাংলাদেশে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ প্রবেশ করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে এদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে নেপাল। দেশটি থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়েছিল। তবে পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৩৮ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে এসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর বিষয়টি ছিল পরীক্ষামূলক। সব কিছু ঠিক আছে কিনা, যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে সহসাই বাণিজ্যিক সরবরাহ শুরু করবে নেপাল।

ভারতের সঙ্গে নেপালের গ্রিড লাইন রয়েছে। সেই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ ভারতে প্রবেশ করছে। সেখান থেকে ভারতীয় গ্রিড লাইন ব্যবহার করে ভেড়ামারা দিয়ে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন— জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘এর আগে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি আমাদের সঙ্গে একপক্ষীয় চুক্তি করেছে। এই চুক্তিগুলোতে আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎও বাড়তি দামে কেনা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে কমদামে বিদ্যুৎ দেওয়ার যে চিন্তা, তা এই চুক্তির মাধ্যমে সম্ভব হবে না।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখি। আমাদের দেশে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে; যেগুলো অলস পড়ে আছে। সেখানে কেন আমাদের অন্য একটি দেশ থেকে এত অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে?’

তিনি বলেন, ‘সরাসরি নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হলে আমাদের জন্য লাভজনক হতো। কিন্তু ভারত হয়ে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসায় সেখানে আমাদের বিরাট অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।’ ফলে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, নেপাল এবং ভুটানে প্রায় ১ লাখ মেগাওয়াট জলবিদ্যুতের উৎস রয়েছে। এসব উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে প্রতিবেশীরা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ভারত তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশকে গ্রিড লাইন নির্মাণ করতে দিতে চায় না। এ বিষয়ে আগে আইন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির সরকার। বর্তমানে আইনটি বাতিল করা হলেও তাদের অবস্থান একই রয়েছে। ভারত তাদের দেশের কোনও কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির কাজ করে দিতে চায়। সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানি করলে যে সুবিধা পাওয়া যেতো ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে আসলে তা পাওয়া সম্ভব না।

সম্প্রতি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়াতে একটি কমন গ্রিডলাইন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পোস্টটি শেয়ার করুন