বাংলাদেশের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে নিয়ে রাজনীতি করে তাদের একক মালিকানা দাবি করে ব্যর্থতা এসেছে। সেইসঙ্গে যারা ১৯৭১ সালের চেতনা ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চেয়েছিল, তারা চূড়ান্তভাবে হতাশ হয়েছেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের সব মানুষের সংগ্রাম ছিল। যারা ১৯৭১ এর চেতনা নিরপেক্ষভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাননি বা দলীয়ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তারা ইতিহাসের অবাঞ্ছিত ঔজ্জ্বল্য থেকে হারিয়ে গেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের প্রত্যাশা হলো বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধিকার। মানুষ স্বাধীনতা, সমাজের বৈষম্য দূর করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একসূত্রে বাঁধা। এই সকল আন্দোলনের সম্মিলিত প্রত্যাশাই হলো গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফল নয়; এটি এক দীর্ঘ সংগ্রামের ফল যা ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল, যেখানে বহু মানুষের রক্ত ঝরেছে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, জনগণের ভোটের জন্য নিজেদের দলের বিপক্ষে কিছু বলে না। তারা নিজের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে, কিন্তু আমরা যেন সে সময়ের ইতিহাস ভুলে না যাই। অনেকেই বলেছিলেন, পাবলিক রিলেশন ছাড়া নির্বাচন হবে না, আবার একই দিনে গণভোট হলে তা সম্ভব নয়—তাদের এ সব অপপ্রচার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তবে এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় ভোটের প্রত্যাশা জেগেছে। বিএনপি গণতন্ত্রের সংজ্ঞা জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করে, ভবিষ্যতে টেকসই রাজনীতির জন্য মেধা ও প্রযুক্তি নির্ভর রাজনীতি প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কৃষি আধুনিকায়ন ও কৃষকদের উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কৃষিকে শক্তিশালী করলে দেশের অর্থনীতির মুক্তি সম্ভব। কারণ, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই কৃষক, এবং দেশের মাটি ১২ মাস ফসল ফলানোর জন্য উপযুক্ত। সে সময় তিনি দলের কার্যকলাপের জন্য স্বাস্থ্য, পরিবারের ও শিক্ষার কার্ডের সুফল সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য আহ্বান জানান।
৩১ দফা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি বলেছিলেন, শুধুমাত্র আবেগঘন ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা ও অপ্রতিরোধ্য বিভ্রান্তির মাধ্যমে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে পারব না। আমাদের পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি দরকার, যা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই দেশের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। ৩১ দফা হলো বাংলাদেশের মুক্তির সনদ, যা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বিভিন্ন শাখা, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজ ও ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রী, কেন্দ্রীয় ও স্থায়ী নেতারা অংশগ্রহণ করেন।





