শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২

মধ্যস্বত্বভোগীরা দখল করে সবজির লাভ, কৃষকেরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত

শীতের মৌসুম উপলক্ষে লালমনিরহাটের কৃষিপ্রধান জেলা সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার বাজারগুলো এখন জমে উঠেছে। কৃষকেরা এই সময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন শীতকালীন সবজি চাষ, পরিচর্যা ও বাজারে সরবরাহের কাজে। তবে জেলার অনেক এলাকায়, বিশেষ করে ফুলকপি ও বাঁধাকপি ফলন ভালো হলেও কৃষকেরা কোনোমতেই কাঙ্ক্ষিত লাভ পাচ্ছেন না।

প্রতিদিন দুর্গাপুর এলাকার ট্রাকগুলো নানা রঙে ভরা ফুলকপি রংপুর, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে প্রতি পিস ফুলকপি ১২ থেকে ১৪ টাকা এবং পাতাকপি ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে একটি সাধারণ ফুলকপি ওজন প্রায় ১ থেকে আড়াই কেজি। এ হিসাবে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজির দাম পরিবহন খরচ ও অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়।

অন্য দিকে, জেলার খুচরা বাজারে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। শহরের গোশালা বাজার, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর ও বুড়ির বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এবং পাতাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকায়। ফলে কৃষকের মাঠ থেকে বাজারে দামের এই পার্থক্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজারে দামের এই বিশাল ব্যবধানের কারণ সম্পর্কে বড়বাড়ী কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ী মজিদুল মিয়া জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে যা দামে সবজি সংগ্রহ হয়, তা পরে আড়তে এসে পরিবর্তিত হয় বিভিন্ন কারণে।

এদিকে, সংরক্ষণ সুযোগের অভাবে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন। কাকিনা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, সবজি দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় লোকসান দিয়েই তাদের সেটি বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, বড়বাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ফলন ভালো হলেও দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচের হিসাব মিলছে না।

নাগরিক ও ভোক্তারাও বাজারে সবজি ও দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, এই জেলা সাধারণত সবজির জন্য পরিচিত, এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হলেও বর্তমান দামের কারণে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ক্রয়-সংরক্ষণের ব্যবস্থা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অংশীষ পর্যবেক্ষকদের মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় সবজি উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৫৩৫০ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে আলু বাদে অন্যান্য সবজি বেশি আবাদ হয়েছে। এই আবাদ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশাটা রয়েছে। তবে, কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারকে দ্রুত মাঠ ও বাজারের দামের ব্যবধান কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য দরকার সরকারি তদারকি জোরদার, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষক ও বিক্রেতাদের সরাসরি বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা। পাশাপাশি সংরক্ষণাগার ও পরিবহন সুবিধা বাড়ালে কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন এবং ভোক্তারাও উপকৃত হবেন।

সূত্র: বাসস

পোস্টটি শেয়ার করুন