বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের দাম কমানোর জন্য সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এই লক্ষ্যে দেশে উৎপাদন এবং আমদানির উভয় ক্ষেত্রেই করের ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি জানান, ব্যবসা সহজ করার জন্য এখন অভ্যন্তরীণ করের পরিবর্তে মূলত ভ্যাট ও আয়কর আদায়ের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, অবৈধ আমদানির রোধে মোবাইল ফোনের শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)’ নামে একটি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ভবিষ্যতে মোবাইলের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
এনবিআরে আধিকারিকরা বলছেন, পৃথিবীর কোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ট্রেড থেকে এত বেশি কর নেওয়া হয় না। এই করের মূল লক্ষ্য হলো দেশের স্থানীয় শিল্প ও শিল্পোদ্যোগের সুরক্ষা দেওয়া। তবে, মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রেও এই রীতি প্রযোজ্য। মোবাইল নির্মাতাদের মতে, শুল্ক কমানো বা বাড়ানো মানে তাদের ব্যবসার উপর অনেক প্রভাব ফেলতে পারে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, শুল্ক কমালে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
অন্যদিকে, আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, মোবাইল ফোনের মূল্য ও ভ্যাট মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৬১.৮ শতাংশ কর থাকলেও, এটি কমানোর চিন্তাভাবনাও চলছে। এখন থেকে বিজয় দিবস থেকে ‘এনইআইআর’ (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার) পদ্ধতি চালু হচ্ছে, যা অবৈধ মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি হওয়া ফোনগুলো আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবে ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে অবৈধ ফোনের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে এবং নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে পারবেন না।
বর্তমানে, অবৈধ মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার থাকায় সরকার আনুষ্ঠানিক আমদানি থেকে রাজস্ব সংগ্রহে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। যদি ফরমাল চ্যানেলে মোবাইল আমদানি বৃদ্ধি পায়, তবে সরকারের কর রাজস্বও বাড়বে বলেও জানানো হয়।
অতিরিক্ত উচ্চ আমদানি শুল্ক অনেক সময় স্থানীয় শিল্প রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। তবে, বর্তমানে এই শুল্কের হার কমানোর মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং ভোক্তার জন্য দাম কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
মোবাইল ফোনের আমদানিতে বর্তমানে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মিলে মোট প্রায় ৬১.৮ শতাংশ কর আরোপित। উৎপাদন ও আমদানির ভিন্নতা অনুযায়ী এই হার বেশ পরিবর্তিত হতে পারে।
এদিকে, এনইআইআর পদ্ধতির বিরুদ্ধে মোবাইল ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এই পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে দেশে অবৈধ মোবাইল ব্যবহার বন্ধ হবে এবং পুরোনো, অবৈধ ফোনের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বৈঠক করে তিন মাসের জন্য কিছু ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।





