মঙ্গলবার, ৭ই অক্টোবর, ২০২৫, ২২শে আশ্বিন, ১৪৩২

বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগ ফিরে আসছে

দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘ দিন ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে আসছিল। তবে সম্প্রতি সেপ্টেম্বরে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের কিছুটা লক্ষণ দেখা গেছে। মাসের শেষের দিকে, বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারী ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৪০টির মতো। একই সময়ে দেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে সক্রিয় বিও হিসাব ছিল ৪৩,৭৬১টি। সেপ্টেম্বরে এসে তা একটু বাড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ৪৩,৮০১টিতে দাঁড়ায়। যদিও এই সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় এখনও অনেক কম। গত বছর অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ৫৫,৫১২টি, অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এই হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১১,৭১১টি।

অন্যদিকে, স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও সেপ্টেম্বরে শেয়ারবাজারে কিছুটা সক্রিয় হয়েছেন। আগস্টে তাদের বিও হিসাব ছিল ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ১০৪টি, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৫টিতে। এক মাসে এই হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ হাজার ৫৯১টি। তবে বছর শুরুতে মোট বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১, আর এখন তা কমে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ২২৭টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ নয় মাসে কমেছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩২৪টি।

বিনিয়োগকারীর ধরন অনুযায়ী দেখা যায়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়েছে ৫ হাজার ৫৭৮টি, নারীদের মধ্যে বেড়েছে ১ হাজার ৪৯টি, এবং কোম্পানি হিসাব বেড়েছে ১৯৯টি। এছাড়া, একক নামে বিও হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ২১৯টি, আর যৌথ নামে বেড়েছে ১ হাজার ৪০৮টি।

এখনও পর্যন্ত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও, এর ফলে সূচকের কোনও স্বাভাবিক উন্নতি হয়নি। আগস্টের শেষের দিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৫৯৪ পয়েন্ট, যা সেপ্টেম্বরে নেমে এসে পৌঁছায় ৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে। অর্থাৎ, এক মাসে সূচক কমেছে ১৭৯ পয়েন্ট।

বাজারের মোট মূলধনও হ্রাস পেয়েছে। আগস্ট শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকায়। এতে মোট কমে ২ হাজার ৮৫ কোটি টাকা।

লেনদেনের পরিমাণও নিম্নমুখী। একসময় প্রতিদিন দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হত, কিন্তু এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি টাকার আশপাশে। সেপ্টেম্বরে শেষ ১৫ কার্যদিবসে কোনও দিনই লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে বলে দেখা যায়নি।

বিশ্লেষकों মতে, বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও বাজারের জন্য এটি ইতিবাচক সংকেত হয়নি। সূচক ও মূলধনের বিষয়টি এখনও ব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ফিরে আসেনি। মৌলিক সমস্যাগুলি সমাধান না হওয়ায় বাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের স্বাভাবিকতা ফেরাবে কি না, তা এখনও প্রশ্নের বাড়তি রইল।

পোস্টটি শেয়ার করুন